অম্বল বা acidity তে ভোগেননি এমন মানুষ দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমরা ছোট বড় সকলেই কম বেশি অম্বল সমস্যায় ভুগে থাকি। আসলে অম্বল হল আমাদের শরীরের তথা পেটের এক অস্বস্তিকর অবস্থা।
আমাদের পাকস্থলীতে (Stomach) থাকে হইড্রোক্লোরিক এসিড (HCL) যা খাদ্যবস্তু হজমে সাহায্য করে। আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন সেটা খাদ্যনালীর মাধ্যমে সরাসরি আমাদের পাকস্থলী এসে পৌঁছায়। তারপর খাবার পাকস্থলীতে এলে হইড্রোক্লোরিক এসিডএর ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। এই হইড্রোক্লোরিক এসিড এবং কয়েকটি এনজাইমএর সাহায্যে খাদ্যবস্তু ভেঙে সরল হয়ে হজম হয়ে যায়। অবশ্য সব খাবার পাকস্থলীতে হজম হয় না। যেসব খাবার পাকস্থলীতে হজম হয় না সেগুলি ক্ষুদ্রান্ত্র (Small Intestine), বৃহদন্ত্র (Largre Intestine) প্রভৃতিতে হজম হয়ে যায়।
অম্বল হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকে। আমরা প্রায় সকলেই অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার (Spicy food), ভাজাভুজি (Fast food) ইত্যাদি খেতে খুব ভালোবাসি যার ফলস্বরূপ অম্বলে ভুগে থাকি। এছাড়া অতিরিক্ত দৈহিক চাপ (Stress) গ্রহণ, ব্যায়াম (Exercise) না করা, ঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, মদ্যপান (Alcohol) ইত্যাদি অম্বলের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।
কিভাবে বাড়িতে বসে অম্বলের সমস্যা দূর করবেন তা আলোচনা করা হল। আশা করছি ঐগুলো অনুসরণ করলে আপনার অম্বল (Acidity) সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
অম্বল (Acidity) থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন? (How to prevent Acidity?):
1. জলপান করা (Drinking water):
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে দুই গ্লাস জল পান করুন। এতে আপনার পাকস্থলীর এসিড মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অম্বল হবে না।
যদি আপনি regular অম্বলে ভোগেন তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ঈষদুষ্ণ গরম জল পান করুন। কখনোই খাবার খেতে খেতে বা খাবার খাওয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল খাবেন না। এতে আপনার পাকস্থলীর এসিড ক্ষরণ মাত্রা বেড়ে যাবে এবং অম্বলে ভুগবেন। তাছাড়া এরফলে আপনার হজমেও গন্ডগোল দেখা দিতে পারে।
2. তুলসীর পাতা (Basil leaves):
তুলসীর পাতার পেট ঠান্ডা এবং এসিড কমানোর ক্ষমতা আছে। তাই যদি আপনার অম্বল হয় তাহলে কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খান। তৎক্ষণাৎ অম্বল থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়া আপনি গ্যাস বা বমিভাব থেকেও মুক্তি পাবেন।
কয়েকটি তুলসী পাতা ছিঁড়ে গরম জলে ডুবিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর সেই জল ছেঁকে চায়ের মত করে খান। এইভাবে নিয়মিত খেলে অম্বলের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
3. আদা (Ginger):
আদা হল অম্বল নিরাময়ের একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। আমাদের প্রতিদিনের খাবারে আদা নির্ধারিত করা হয়েছে। যার ফলে আমাদের শরীরের pH level বজায় থাকে।
যদি আপনার অম্বল হয়ে থাকে তাহলে এক টুকরো আদা কুচি চিবিয়ে খান। তাহলে তৎক্ষণাৎ অম্বল কমে যাবে।
এছাড়া অন্য একটি উপায় আছে। আদার কয়েকটি টুকরো এক গ্লাস গরম জলে ফেলে দিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে পান করে ফেলুন। এতে আপনার অম্বল কমে যাবে।
4. ডাবের জল (Coconut water):
পেটের যেকোন সমস্যায় ডাবের জল খুবই উপকারী। ডাবের জল আমাদের পেট ঠান্ডা রাখে এবং পাকস্থলীর এসিড সাম্য বজায় রাখে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি ডাবের জল খেলে অম্বল সহ পেটের যেকোন সমস্যা দূর হয়।
5. পুদিনা পাতা (Mint leaves):
অম্বল থেকে দ্রুত মুক্তি পাবার জন্য পুদিনা পাতা খেতে বলা হয়। এই পুদিনা পাতা আপনি জল সহ চিবিয়ে বা গরম জলে পুদিনা পাতা ফেলে সেই জল ঠান্ডা করে খেতে পারেন। এর ফলে আপনার অম্বল দূর হবে।
6. ঠান্ডা দুধ (Cold milk):
দুধ আমাদের পাকস্থলীর এসিড ভারসাম্য বজায় রাখে। দুধে আছে ক্যালসিয়াম যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ হতে বাধা দেয়। ফলে আমাদের অম্বল সমস্যা দূর হয়।
আপনার অম্বল সমস্যা থাকলে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ খান। এতে আপনার অম্বল সমস্যা দূর হবে।
7. গুড়ের মিঠাই (Jaggery):
অম্বল সমস্যা দূর করার একটি কার্যকারী ঘরোয়া উপাদান হল গুড়ের মিঠাই। মুড়ি বা অন্য কোন শুকনো খাবারের সাথে মিঠাই খেলে অম্বল সমস্যা দূর হয়।
এছাড়া আপনি গুড়ের মিঠাই জলে গুলেও খেতে পারেন। একই উপকার পাবেন।
8. লবঙ্গ (Cloves):
আমাদের পাকস্থলীতে খুব বেশি হইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ হলে অম্বল সমস্যা শুরু যেমন হয় তেমনি পাকস্থলীতে কম হইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ হলেও অম্বল হতে পারে।
লবঙ্গতে বায়ু নাশকারী ক্ষমতা (Carminatives effect) থাকার জন্য ইহা পাকস্থলীতে হইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। ফলে আমাদের পেটের অম্বল সমস্যা দূর হয়।
4. ডাবের জল (Coconut water):
পেটের যেকোন সমস্যায় ডাবের জল খুবই উপকারী। ডাবের জল আমাদের পেট ঠান্ডা রাখে এবং পাকস্থলীর এসিড সাম্য বজায় রাখে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি ডাবের জল খেলে অম্বল সহ পেটের যেকোন সমস্যা দূর হয়।
5. পুদিনা পাতা (Mint leaves):
অম্বল থেকে দ্রুত মুক্তি পাবার জন্য পুদিনা পাতা খেতে বলা হয়। এই পুদিনা পাতা আপনি জল সহ চিবিয়ে বা গরম জলে পুদিনা পাতা ফেলে সেই জল ঠান্ডা করে খেতে পারেন। এর ফলে আপনার অম্বল দূর হবে।
6. ঠান্ডা দুধ (Cold milk):
দুধ আমাদের পাকস্থলীর এসিড ভারসাম্য বজায় রাখে। দুধে আছে ক্যালসিয়াম যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ হতে বাধা দেয়। ফলে আমাদের অম্বল সমস্যা দূর হয়।
আপনার অম্বল সমস্যা থাকলে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ খান। এতে আপনার অম্বল সমস্যা দূর হবে।
7. গুড়ের মিঠাই (Jaggery):
অম্বল সমস্যা দূর করার একটি কার্যকারী ঘরোয়া উপাদান হল গুড়ের মিঠাই। মুড়ি বা অন্য কোন শুকনো খাবারের সাথে মিঠাই খেলে অম্বল সমস্যা দূর হয়।
এছাড়া আপনি গুড়ের মিঠাই জলে গুলেও খেতে পারেন। একই উপকার পাবেন।
8. লবঙ্গ (Cloves):
আমাদের পাকস্থলীতে খুব বেশি হইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ হলে অম্বল সমস্যা শুরু যেমন হয় তেমনি পাকস্থলীতে কম হইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ হলেও অম্বল হতে পারে।
লবঙ্গতে বায়ু নাশকারী ক্ষমতা (Carminatives effect) থাকার জন্য ইহা পাকস্থলীতে হইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। ফলে আমাদের পেটের অম্বল সমস্যা দূর হয়।
2 - 3 টি লবঙ্গ নিয়ে তা চিবিয়ে খেলে বা গুঁড়ো করে জলের মিশিয়ে খেলে অম্বল সমস্যা দূর হয়। এছাড়া এর ফলে আমাদের মুখের মধ্যে একটা ফ্রেশনেস ভাব চলে আসে। মুখের গন্ধ দূর হয়।
9. এলোভেরা (Aloe vera):
আপনারা হয়তো আগে শুনে থাকবেন যে এলোভেরা তো ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আলোভেরার মধ্যে একটা cooling effect থাকার জন্য এটি পেটের সমস্যার জন্য খুব উপকারী।
পেটে অম্বল হলে এলোভেরা জুস খেলে তা আমাদের খাদ্যনালীর জ্বলন, বুক জ্বালা প্রভৃতি থেকে মুক্তি দেয়। 9. এলোভেরা (Aloe vera):
আপনারা হয়তো আগে শুনে থাকবেন যে এলোভেরা তো ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আলোভেরার মধ্যে একটা cooling effect থাকার জন্য এটি পেটের সমস্যার জন্য খুব উপকারী।
অম্বল হলে দুই টেবিল চামচ এলোভেরা জুস খেলে অম্বল দূর হয় এবং পেট বরফের মত ঠান্ডা হয়।
10. জিরা (Jeera):
জিরা পেটে saliva উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় ফলে গ্যাস, অম্বল, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়। জিরার এই অসাধারণ গুণ থাকার জন্য জিরা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।
পেটে অম্বল হলে কয়েকটি গোটা জিরা চিবিয়ে খেতে পারেন বা জিরা গুঁড়ো করে গরম জলে দিয়ে সেই জল ঠান্ডা হলে খেতে পারেন। এতে অম্বল সমস্যা তৎক্ষণাৎ দূর হবে।