রিকেটের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Ricket - It's Cause, Symptoms & Treatment in Bengali

রিকেট(Ricket) কথাটির অর্থ হল অস্থির বিকৃতি অথবা অপুষ্টিগত অস্থি বা মেরুদণ্ডের বিকৃতি। এই রোগটি প্রধানত শিশুদের মধ্যেই দেখা যায়। এই রোগ দেহের অভ্যন্তরীণ পুষ্টিহীনতার লক্ষণ। সাধারণত সন্তানকে স্তনদান থেকে বঞ্চিত করাই ইহার প্রধান কারণ। এছাড়া পানীয়ের অভাব, বিশুদ্ধ জলবায়ুর অভাব ইত্যাদিও রয়েছে।



পরিপুষ্টির অভাবে শিশুদের দাঁতের যথাযথ নির্গমন দেখা যায় না। অপুষ্ট অস্থির ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে মাথায়, কপালে, মেরুদণ্ডের, বুকের, হাতের, পায়ের বৈকল্য প্রকাশ পায়। রিকেট গ্রস্ত শিশুর রক্তের পরিবর্তন ঘটে। শ্বেত কণিকা(WBC) দ্বিগুণ হতে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পায় এবং হিমোগ্লোবিন বা লোহিত কণিকা(RBC) 40 থেকে 50 ভাগ কমে যায়। রক্তহীনতার ভাব প্রকাশ পায়।

শিশুদের রিকেট হওয়ার কারণ (Causes of Ricket):

রিকেট হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে মূলত যেসব কারণে রিকেট হতে পারে সেগুলি হল -

1. শিশুদের দেহে শ্বেতসার বাহুল্য।

2. শিশুদের দেহে স্নেহ ও চর্বি (Fat) জাতীয় খাদ্যের অভাব।

3. দেহে আমিষ(Protein) খাদ্যের অভাব।

4. ভিটামিন D এর অভাব।

5. দেহে সূর্যালোকের অভাব।

6. বিশুদ্ধ বায়ুর অভাব।

রিকেটের লক্ষণ (Symptoms of Ricket):

এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায় সেগুলি হল -
1. শিশুর স্বাস্থ্য হীনতা, নিদ্রাকালীন শিশুর মস্তকে ঘাম হওয়া।

2. পেশির দুর্বলতার জন্য শিশু হাত পা ব্যবহার করতে পারে না, সবসময় কোলে উঠে বেড়াতে চায়।

3. প্রায়ই পেটের অসুখে ভোগে। উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য লেগে থাকে। সর্দি কাশিতে ভোগে, স্নায়ুবিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

4. শিশুর মাথা গোলাকার না হয়ে চারকোনা যুক্ত হয় এবং কপাল ঢিবির মত উঁচু হয়। মাথার পিছনের দিকের চুল উঠে যায়, মাথা বড় দেখায়, চোয়ালের কোনা বের হয়ে যায়।

5. বুকের গঠন বিকৃতি হয়, পাখির মত মধ্যভাগ উঁচু, পাঁজর গুলো নিচের দিকে ঝুলে পড়ে, টনসিল বৃদ্ধি পায়, লিভার এবং প্লীহা বৃদ্ধি পায়। রক্তহীনতার ভাব।

6. সন্ধিস্থলের হাড় মোটা, অসঙ্গত এবং অনিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পায়। পায়ের হাড় ধনুরাকৃতি, পাঁজরের হাড় বাঁকা হয়।

7. বগলের এবং অন্যান্য দিকের গ্ল্যান্ড ফোলা থাকে। পেট বড় হয় এবং ঝুলে পড়ে। শারীরিক দুর্বলতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং হাড় ভঙ্গুর প্রকৃতির ইত্যাদি।

চিকিৎসা (Treatment):

1. এই রোগে ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস মিশ্রিত খাবার শিশুকে খেতে দিতে হবে।

2. ভিটামিন A এবং D সমৃদ্ধ খাঁটি কডলিভার অয়েল এই রোগে বিশেষ উপযোগী ওষুধ। শিশুদের এটি সহজে হজম হয় এবং খুব পুষ্টিকর।

আনুষঙ্গিক ব্যাবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):

ভিটামিন যুক্ত তেল দিয়ে শিশুর সারা দেহ মালিশ করতে হবে। মালিশ করার পর শিশুকে সকালের দিকে রোদে ঘন্টাখানেক শুয়ে রাখতে হবে। এতে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।

গরুর দুধ, মাখন, ঘি, ছানা, ডিমের হলুদ কুসুম প্রভৃতিতে প্রচুর ভিটামিন D থাকে। গরুর দুধে মায়ের দুধের থেকে 8 থেকে 10 গুন বেশি ভিটামিন D থাকে। তবে অতিমাত্রায় ভিটামিন D খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ ভিটামিন D বেশিদিন গ্রহন করলে দেহে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে ফলে ক্ষুধাহীনতা, ডায়রিয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, বমি বমি ভাব, ওজন কমে যায়, পিপাসা, মাথা যন্ত্রণা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

শিশুকে কড মাছের যকৃৎ তেল, মাছ, ইলিশ মাছ, মাংস প্রভৃতি অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। হরলিক্স, কমপ্লান, ভিভা ইত্যাদি খাওয়ান ভালো। জন্মের একমাস পর থেকে শিশুদের Dropovit drops দৈনিক 5 ফোঁটা করে এবং এক বছর পর থেকে দৈনিক 10 - 15 ফোঁটা করে খাইয়ে যেতে হবে।