শিশুদের হামের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Measles - It's Causes, Symptoms & Treatment in Bengali

হাম(Measles) হল শিশুরোগ গুলির মধ্যে অন্যতম একটি জ্বালাময় রোগ। ইহা একটি ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ। ইহা সর্দি জ্বর এবং ঘামাচির ন্যায় এক প্রকার লাল বর্ণের গুটি(Rash) সহ প্রকাশ পায়।



এই গুটি(Rash) গুলি একসঙ্গে মিলে অসমান দলে পরিণত হয়। আবার অনেক সময় অর্ধচন্দ্রাকৃতির মত সজ্জিত হতে দেখা যায়। এই রোগে জ্বর অবিরাম অবস্থায় থাকে। ইহা শীতকালে(Winter) এবং বসন্তকালে(Spring time) বেশি হতে দেখা যায়।


হামের কারণ (Causes of measles):


ইহা একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের জীবাণুর নাম হল কক্কাস রুবেলী (Coccus Rubeloe) যা Togavirus পরিবারভুক্ত। এই জীবাণু রোগীর স্বাস প্রশ্বাস, নাসাস্রাব এবং অশ্রুর (Eye water) দ্বারা চারিদিকে ছড়ায়। এই জন্য রোগীর কাছাকাছি থাকলে সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে।

অনেক সময় আমাদের ধারণা থাকে যে একটি শিশুর একবার হাম হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার তার আর হাম হয় না। কিন্তু এই ধারণা সবসময় সত্যি হয় না। কোন কোন শিশুর 2 - 3 বার হাম হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাধারণত 10 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে 6 মাস থেকে 5 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সংক্রামিত হতে বেশি দেখা যায়।

শিশুর দেহে গুটি গুলি যখন বের হয় তখন এই রোগ অতি সংক্রামক হয় এবং গুটি গুলি সব বেরিয়ে যাবার পর ইহা কমজুরি হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণ ক্ষমতা লোপ পায়।

হামের লক্ষণ (Symptoms of measles):


1. প্রথমে ভয়ানক সর্দি, শীত শীত বোধ, নাক থেকে সর্দি ঝরে, চোখে জলের উপস্থিতি, সারা মুখ থমথমে দেখায়, সমস্ত শরীরে বেদনা হয়।

2. জ্বর শুরু হওয়ার তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে হামের গুটি গুলি দেখা দেয়। জ্বর প্রথমে কম থাকে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জ্বর হওয়ার পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনে হাম সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে পড়ে। গুটি গুলি বের হয়ে যাওয়ার পর জ্বর কমতে থাকে। শিশুর শরীরে সর্বদা জ্বালা এবং অস্বস্তিকর ভাব থাকে।

3. আট থেকে নয় দিনের মধ্যে হাম রোগের সমস্ত গুটি(rash) সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে যায়। অনেকসময় হামের গুটি হঠাৎ মিলিয়ে যায় এবং নানা উপসর্গ দেখা যায়। যেমন - নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, কর্ণপ্রদাহ (Mumps) ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয় (Diagnosis):


1. সাধারণত শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

2. জ্বর, সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে জল ঝরা, প্রচন্ড শুষ্ক কাশি(Dry cough), ফারিংজাইটিস, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি।

3.  জ্বর হওয়ার তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে হামের গুটির আবির্ভাব।

4.  সেরোলজিক টেস্ট দ্বারা এই রোগ ধরা যায়।

5. প্রথম দিকে blood count এ লিউকপিনিয়া থাকে। পরের দিকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা যায়। তবে লিউকোসাইটোসিস দেখা যায়।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):


প্রথম দিকে শিশুকে কিছু মিষ্টদ্রব্য খাওয়ানো ভালো। এরফলে গুটি নির্গমনে সাহায্য হয়। এই অবস্থায় তরল খাদ্য খাওয়ানো ভালো। জ্বর ছেড়ে গেলে সিদ্ধ ভাত, চারা পোনার ঝোল, সিদ্ধ ডিম, ঘি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে।

রোজ গরম জলে রোগীর গা হাত স্পঞ্জ করতে হবে। স্পঞ্জের সময় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে। রোজ ভোরবেলায় মৌরি ও তালমিছড়ি ভেজানো জল রোগীকে খেতে দিতে হবে। এতে রোগীর পেট ঠান্ডা থাকে।

শিশুকে 10 - 15 দিন পৃথক ঘরে বিশ্রামে রাখতে হবে। দীর্ঘদিন হাম এবং ফুসফুসের রোগে ভুগলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সঙ্গে পুষ্টিকর পথ্য, বিশ্রাম ও ভিটামিন না পড়লে স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়।

প্রথম দিকে শিশুকে হরলিক্স, কমপ্লান, দুধ, সাগু, ফলের রস দিতে হবে। জ্বর কমলে টোস্ট, পাতলা সুপ, ছানা বা সন্দেস, আলু সেদ্ধ প্রভৃতি দেয়া যায়। যদি উদরাময়(Cholera) থাকে তবে দুধ দেওয়া নিষিদ্ধ। তার বদলে ডাবের জল, বার্লি, ছানার জল ইত্যাদি দিতে হবে।

রোগীর সংস্পর্শে যারা আসবে তাদের 10 - 15 দিন পৃথক ঘরে রাখতে হবে এবং 5 বছরের নিচের শিশুদের রোগীর সংস্পর্শে আসতে দেওয়া যাবে না। যারা হামের সংস্পর্শে আসবে তাদের exposure এর দু দিনের মধ্যে হামের লাইভ ভ্যাকসিন নিলে রোগের ভয় থাকে না। তবে সর্দি জ্বরে ভুগলে, গর্ভবতী মায়েদের এই টীকা নেওয়া নিষিদ্ধ।

শিশুদের কলেরার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Infantile Cholera - It's Causes, Symptoms & Treatment in Bengali

কলেরা (Cholera) শিশুদের একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগের সঙ্গে বমি ও পায়খানা হতে থাকে। এতে মলের (Stool) সঙ্গে খুব বেশি আম পড়ে না। আমাশয় রোগী খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে না কিন্তু কলেরা রোগী তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে। পাকস্থলীর অজীর্ণতা হেতু বমি, পায়খানা, মাথায় যন্ত্রণা, প্রদাহ, কম্পন প্রভূতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।



শিশুদের কলেরা হওয়ার কারণ (Cause of Infantile cholera):


কলেরা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম হল Vibrio cholerae. ইহা দেখতে ইংরাজি কমার(,) মত। এর জন্য ইহার নাম দেওয়া হয়েছে কমা জীবাণু। এই জীবাণুই কলেরা রোগের উত্তেজক কারণ।

এছাড়া কলেরা রোগের আরও কিছু গৌণ কারণ আছে। যেমন - অপরিমিত আহার গ্রহণ, গুরুপাক দ্রব্য ভোজন, দূষিত জলপান করা ইত্যাদি। রাত্রি জাগরণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করা ইত্যাদি কারণ দেহের প্রতিরোধক শক্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং যার ফলে কলেরা রোগ সহজেই আক্রমণ করে।

কলেরার লক্ষণ (Symptoms of Cholera):


1. হঠাৎ এই রোগের উৎপত্তি, অতি তাড়াতাড়ি হীনবল হয়ে পড়া, ঘুম ঘুম ভাব, সারা শরীরে কম্পন, অস্থিরতা, শ্বাসকষ্ট, নাড়ীর গতি লোপ পাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া।

2. শিশুর জলের মত পায়খানা হয় বলে শরীরের জলের ভাগ দ্রুত কমে যায় এবং খিঁচুনি ভাব শুরু হয়, ধীরে ধীরে হৃদশক্তি কমে যায়।

3. রক্তের মধ্যে লবণ ও জলের অভাব হলেই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। এই রোগে দেহ থেকে অতিরিক্ত জল পায়খানার সাথে বের হয়ে যায় বলে এই রূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ইহাকে Dehydration বলে। ইহার ফলে মূত্র স্বল্পতা দেখা দেয়।

4. কলেরার জীবাণু দেহে প্রবেশ করার 12 থেকে 36 ঘন্টার মধ্যে রোগ লক্ষণ দেখা দেয়। পায়খানা চাল ধোয়া জলের মত দেখায়, উহাতে ছোট ছোট সাদা রঙের পর্দা ভাসতে থাকে।

5. প্রবল উদরাময় হয় কিন্তু পেটে কোন ব্যথা থাকে না। জল পান ছাড়াই বমির উদ্রেক হয় এবং বমি হয়। অতিরিক্ত পায়খানা ও বমি হলে শিশুর অসাড়তা বৃদ্ধি পায়। মলের কোন রঙ থাকে না। মূত্র কম হয়, হেঁচকি ওঠে এবং খুব কষ্টদায়ক, পেটের মাংস পেশির সংকোচন এবং দেহের তাপমাত্রা কমে যায়।

6. চোখের কোণ গুলি এবং গায়ের চামড়া শুকনো ভাব হয়ে যায়, নারীর গতি ক্ষীণ হয়ে যায়। শিশু অতিশয় দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও অস্থির হয়ে ওঠে। চুপচাপ থাকতে পারে না। প্রচণ্ড জল পিপাসা পায় কিন্তু জলপান করলেই বমি হয়ে যায়।

7. জিভ ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু গুহ্যদ্বার (Anus) গরম হয়, চোখ মুখ বসে যায়, আঙুলের ডগা ও ঠোঁট নীলবর্ণ হয়।

চিকিৎসা (Treatment):


বর্তমানে এই রোগের বেশ কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। এই রোগে শিরা পথে (Intra venus) ফ্লুইড দিয়ে dehydration ঠেকানো যায় এবং এটাই হচ্ছে একমাত্র কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।

এই সঙ্গে টেট্রাসাইক্লিন্স বা কট্রাইমোকক্সাজল দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ফলে ঘন ঘন পায়খানার সংখ্যা এবং পরিমাণ কমে আসে। ফলে IV fluid এর প্রয়োজন ও অনেক কমে আসে।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):


রোগীর শরীর ঠান্ডা বোধ হলে গরম জলের বোতল সেক দিতে হবে। রোগীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে নেই। ঘুম থেকে জাগিয়ে ওষুধ খাওয়ানো নিষেধ। রোগীর পানীয় জল সর্বদাই ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। Acute অবস্থায় গ্লুকোজের জল বরফে ঠান্ডা করে খাওয়ানো উচিত।

বমি বন্ধ হলে ফুটন্ত জল ঠান্ডা করে ORS মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ORS 5 - 7 মিনিট অন্তর অন্তর 20 - 25 ML করে খাওয়াতে হবে। একবারে বেশি করে দিলে বমির আশঙ্কা থাকে।

একটু সুস্থ হলে সুসিদ্ধ ভাত, কাঁচকলার ঝোল, সাগু, বার্লি, ফলের রস, পাতলা দুধ, হরলিক্স ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। কচি শিশুদের স্তনের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত নয়।

কলেরা রোগীর পোষাক পরিচ্ছদ, বিছানা ও শোবার ঘর ফিনাইল বা ডেটল জল দ্বারা ভালোভাবে পরিস্কার করে দিতে হবে।

শিশুদের ডায়রিয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Children Diarrhoea - It's Cause, Symptoms & Treatment in Bengali

ডায়রিয়া(Diarrhoea) বা উদরাময় শিশুদের খুবই একটি common রোগ। শিশুদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার জন্য বার বার তরল ভেদ হওয়াকে ডায়রিয়ার লক্ষণ বলে ধরা হয়। পরিপাক ক্রিয়ার গোলযোগই ডায়রিয়ার পূর্ববর্তী কারণ। শিশুদের ডায়রিয়া অনেকসময় শিশুর মায়ের অজ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞতাবশতই হয়ে থাকে। এই জন্য শিশুর মায়ের ডায়রিয়া সম্বন্ধে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি।



শিশুদের ডায়রিয়া কেন হয়? (What are the causes of children diarrhoea?):


শিশুদের ডায়রিয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন -

1. শিশু যে বয়সে যে খাদ্য হজম করতে পারে না তাকে সেই খাদ্য খাওয়ান। শিশুকে তাড়াতাড়ি বড় এবং বলিষ্ঠ(Strong) করার জন্য অতিরিক্ত আহার করানো।

2. শিশুর অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম লাগা।

3. ভয়, তিরস্কার, মানসিক উত্তেজনাবশত শিশুদের উপদাহ হেতু এই রোগ হতে পারে।

4. শিশুদের দাঁত ওঠার সময় উপদাহ হেতু এই রোগ হতে পারে।

5. শিশুর পাকস্থলীতে খাদ্য পানীয়ের সঙ্গে জীবাণুর (Bacteria) অনুপ্রবেশ ঘটলে ডায়রিয়া হতে পারে।


ডায়রিয়ার লক্ষণ (Symptoms of Diarrhoea):


1. শিশুদের প্রথমে পাতলা এবং পরে জলের মত পাতলা পায়খানা (Loose stool) হয়।

2. পায়খানার বর্ণ নানা রকমের হতে পারে। কখনও বর্ণহীন শুধু জল, কখনও দুধের মত সাদা, সবুজ, ঈষৎ কালো, রক্তাক্ত ও হতে পারে।

3. পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, ক্ষুধাহীনতা বা অস্বাভাবিক ক্ষুধা থাকতে পারে। কৃমি রোগগ্রস্ত শিশুদের রাক্ষুসে ক্ষুধার লক্ষণ থাকে।

4. কোন কোন ক্ষেত্রে জ্বর লক্ষণটি থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে পেটের অসুখের সাথে পাকস্থলীর প্রদাহ(Gastritis) প্রকাশ পায়।

5. শিশু কিছু খেতে চায় না। খাবার পর বমি করে, বমির টক গন্ধ থাকে, আবার কখনও মলের সঙ্গে আম মিশ্রিত থাকে। এই জাতীয় ডাইরিয়াকে মিউকো এন্টারিটিস (Muco enteritis) বলে।

6. মল খুব বেশি তরল হয় না। কোন কোন সময় মলের সঙ্গে গুটলে বা সাদা সাদা শ্লেষ্মার মতো বের হয়। পেটে কামড়ানি ব্যথা এবং কুন্থন থাকে। তবে রোগ নির্ণয়ের সময় ডাইরিয়াকে যেন কলেরা বা আমাশয়ের সঙ্গে ভুল না করা হয়।

7. পায়খানার পরিমাণ খুব বেশি হলে মূত্রের পরিমাণ কমে যায় এবং পিপাসা বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে dehydration লক্ষণ দেখা দেয়। এই সঙ্গে জ্বর, ক্ষুধা হীনতা থাকে এবং রোগ ধীরে ধীরে ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায়। শিশুর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে।

চিকিৎসা (Treatment):


1. ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই কোন ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শিশুর অবস্থা খুব খারাপ হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

2. শিশুকে সহজপাচ্য অর্থাৎ যে খাবার গুলি শিশু সহজেই হজম করতে পারবে সেগুলি খেতে দিতে হবে।

3. শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য শিশুকে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে।

4. ডায়রিয়া গ্রস্থ শিশু সবসময় মায়ের কাছে থাকতে চায়। তাই মায়ের উচিত শিশুর ভালো যত্ন নেওয়া। শিশুকে হালকা গরম জলে স্নান করিয়ে দিতে হবে। শিশুর জামা প্যান্ট নিয়মিত পরিস্কার করে দিতে হবে।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):


শিশুর বারবার বমি হতে থাকলে গ্লুকোজের জল বরফে ঠান্ডা করে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। বড় শিশুদের গ্লুকোজ(Glucose), ডাব ও ছানার জল, কাঁচকলার ঝোল, বার্লি প্রভৃতি খেতে দিতে হবে। দিনে অন্তত পক্ষে একবার ঝোল ও সুসিদ্ধ ভাত খাওয়ালে ভালো হয়। ভালো বিস্কুট, পাকা মিষ্টি ফল অল্প অল্প করে শিশুকে খেতে দিতে হবে। গুরুপাক খাবার দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রিকেটের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Ricket - It's Cause, Symptoms & Treatment in Bengali

রিকেট(Ricket) কথাটির অর্থ হল অস্থির বিকৃতি অথবা অপুষ্টিগত অস্থি বা মেরুদণ্ডের বিকৃতি। এই রোগটি প্রধানত শিশুদের মধ্যেই দেখা যায়। এই রোগ দেহের অভ্যন্তরীণ পুষ্টিহীনতার লক্ষণ। সাধারণত সন্তানকে স্তনদান থেকে বঞ্চিত করাই ইহার প্রধান কারণ। এছাড়া পানীয়ের অভাব, বিশুদ্ধ জলবায়ুর অভাব ইত্যাদিও রয়েছে।



পরিপুষ্টির অভাবে শিশুদের দাঁতের যথাযথ নির্গমন দেখা যায় না। অপুষ্ট অস্থির ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে মাথায়, কপালে, মেরুদণ্ডের, বুকের, হাতের, পায়ের বৈকল্য প্রকাশ পায়। রিকেট গ্রস্ত শিশুর রক্তের পরিবর্তন ঘটে। শ্বেত কণিকা(WBC) দ্বিগুণ হতে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পায় এবং হিমোগ্লোবিন বা লোহিত কণিকা(RBC) 40 থেকে 50 ভাগ কমে যায়। রক্তহীনতার ভাব প্রকাশ পায়।

শিশুদের রিকেট হওয়ার কারণ (Causes of Ricket):

রিকেট হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে মূলত যেসব কারণে রিকেট হতে পারে সেগুলি হল -

1. শিশুদের দেহে শ্বেতসার বাহুল্য।

2. শিশুদের দেহে স্নেহ ও চর্বি (Fat) জাতীয় খাদ্যের অভাব।

3. দেহে আমিষ(Protein) খাদ্যের অভাব।

4. ভিটামিন D এর অভাব।

5. দেহে সূর্যালোকের অভাব।

6. বিশুদ্ধ বায়ুর অভাব।

রিকেটের লক্ষণ (Symptoms of Ricket):

এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায় সেগুলি হল -
1. শিশুর স্বাস্থ্য হীনতা, নিদ্রাকালীন শিশুর মস্তকে ঘাম হওয়া।

2. পেশির দুর্বলতার জন্য শিশু হাত পা ব্যবহার করতে পারে না, সবসময় কোলে উঠে বেড়াতে চায়।

3. প্রায়ই পেটের অসুখে ভোগে। উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য লেগে থাকে। সর্দি কাশিতে ভোগে, স্নায়ুবিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

4. শিশুর মাথা গোলাকার না হয়ে চারকোনা যুক্ত হয় এবং কপাল ঢিবির মত উঁচু হয়। মাথার পিছনের দিকের চুল উঠে যায়, মাথা বড় দেখায়, চোয়ালের কোনা বের হয়ে যায়।

5. বুকের গঠন বিকৃতি হয়, পাখির মত মধ্যভাগ উঁচু, পাঁজর গুলো নিচের দিকে ঝুলে পড়ে, টনসিল বৃদ্ধি পায়, লিভার এবং প্লীহা বৃদ্ধি পায়। রক্তহীনতার ভাব।

6. সন্ধিস্থলের হাড় মোটা, অসঙ্গত এবং অনিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পায়। পায়ের হাড় ধনুরাকৃতি, পাঁজরের হাড় বাঁকা হয়।

7. বগলের এবং অন্যান্য দিকের গ্ল্যান্ড ফোলা থাকে। পেট বড় হয় এবং ঝুলে পড়ে। শারীরিক দুর্বলতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং হাড় ভঙ্গুর প্রকৃতির ইত্যাদি।

চিকিৎসা (Treatment):

1. এই রোগে ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস মিশ্রিত খাবার শিশুকে খেতে দিতে হবে।

2. ভিটামিন A এবং D সমৃদ্ধ খাঁটি কডলিভার অয়েল এই রোগে বিশেষ উপযোগী ওষুধ। শিশুদের এটি সহজে হজম হয় এবং খুব পুষ্টিকর।

আনুষঙ্গিক ব্যাবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):

ভিটামিন যুক্ত তেল দিয়ে শিশুর সারা দেহ মালিশ করতে হবে। মালিশ করার পর শিশুকে সকালের দিকে রোদে ঘন্টাখানেক শুয়ে রাখতে হবে। এতে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।

গরুর দুধ, মাখন, ঘি, ছানা, ডিমের হলুদ কুসুম প্রভৃতিতে প্রচুর ভিটামিন D থাকে। গরুর দুধে মায়ের দুধের থেকে 8 থেকে 10 গুন বেশি ভিটামিন D থাকে। তবে অতিমাত্রায় ভিটামিন D খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ ভিটামিন D বেশিদিন গ্রহন করলে দেহে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে ফলে ক্ষুধাহীনতা, ডায়রিয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, বমি বমি ভাব, ওজন কমে যায়, পিপাসা, মাথা যন্ত্রণা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

শিশুকে কড মাছের যকৃৎ তেল, মাছ, ইলিশ মাছ, মাংস প্রভৃতি অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। হরলিক্স, কমপ্লান, ভিভা ইত্যাদি খাওয়ান ভালো। জন্মের একমাস পর থেকে শিশুদের Dropovit drops দৈনিক 5 ফোঁটা করে এবং এক বছর পর থেকে দৈনিক 10 - 15 ফোঁটা করে খাইয়ে যেতে হবে।