শিশুদের কলেরার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Infantile Cholera - It's Causes, Symptoms & Treatment in Bengali

কলেরা (Cholera) শিশুদের একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগের সঙ্গে বমি ও পায়খানা হতে থাকে। এতে মলের (Stool) সঙ্গে খুব বেশি আম পড়ে না। আমাশয় রোগী খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে না কিন্তু কলেরা রোগী তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে। পাকস্থলীর অজীর্ণতা হেতু বমি, পায়খানা, মাথায় যন্ত্রণা, প্রদাহ, কম্পন প্রভূতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।



শিশুদের কলেরা হওয়ার কারণ (Cause of Infantile cholera):


কলেরা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম হল Vibrio cholerae. ইহা দেখতে ইংরাজি কমার(,) মত। এর জন্য ইহার নাম দেওয়া হয়েছে কমা জীবাণু। এই জীবাণুই কলেরা রোগের উত্তেজক কারণ।

এছাড়া কলেরা রোগের আরও কিছু গৌণ কারণ আছে। যেমন - অপরিমিত আহার গ্রহণ, গুরুপাক দ্রব্য ভোজন, দূষিত জলপান করা ইত্যাদি। রাত্রি জাগরণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করা ইত্যাদি কারণ দেহের প্রতিরোধক শক্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং যার ফলে কলেরা রোগ সহজেই আক্রমণ করে।

কলেরার লক্ষণ (Symptoms of Cholera):


1. হঠাৎ এই রোগের উৎপত্তি, অতি তাড়াতাড়ি হীনবল হয়ে পড়া, ঘুম ঘুম ভাব, সারা শরীরে কম্পন, অস্থিরতা, শ্বাসকষ্ট, নাড়ীর গতি লোপ পাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া।

2. শিশুর জলের মত পায়খানা হয় বলে শরীরের জলের ভাগ দ্রুত কমে যায় এবং খিঁচুনি ভাব শুরু হয়, ধীরে ধীরে হৃদশক্তি কমে যায়।

3. রক্তের মধ্যে লবণ ও জলের অভাব হলেই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। এই রোগে দেহ থেকে অতিরিক্ত জল পায়খানার সাথে বের হয়ে যায় বলে এই রূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ইহাকে Dehydration বলে। ইহার ফলে মূত্র স্বল্পতা দেখা দেয়।

4. কলেরার জীবাণু দেহে প্রবেশ করার 12 থেকে 36 ঘন্টার মধ্যে রোগ লক্ষণ দেখা দেয়। পায়খানা চাল ধোয়া জলের মত দেখায়, উহাতে ছোট ছোট সাদা রঙের পর্দা ভাসতে থাকে।

5. প্রবল উদরাময় হয় কিন্তু পেটে কোন ব্যথা থাকে না। জল পান ছাড়াই বমির উদ্রেক হয় এবং বমি হয়। অতিরিক্ত পায়খানা ও বমি হলে শিশুর অসাড়তা বৃদ্ধি পায়। মলের কোন রঙ থাকে না। মূত্র কম হয়, হেঁচকি ওঠে এবং খুব কষ্টদায়ক, পেটের মাংস পেশির সংকোচন এবং দেহের তাপমাত্রা কমে যায়।

6. চোখের কোণ গুলি এবং গায়ের চামড়া শুকনো ভাব হয়ে যায়, নারীর গতি ক্ষীণ হয়ে যায়। শিশু অতিশয় দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও অস্থির হয়ে ওঠে। চুপচাপ থাকতে পারে না। প্রচণ্ড জল পিপাসা পায় কিন্তু জলপান করলেই বমি হয়ে যায়।

7. জিভ ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু গুহ্যদ্বার (Anus) গরম হয়, চোখ মুখ বসে যায়, আঙুলের ডগা ও ঠোঁট নীলবর্ণ হয়।

চিকিৎসা (Treatment):


বর্তমানে এই রোগের বেশ কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। এই রোগে শিরা পথে (Intra venus) ফ্লুইড দিয়ে dehydration ঠেকানো যায় এবং এটাই হচ্ছে একমাত্র কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।

এই সঙ্গে টেট্রাসাইক্লিন্স বা কট্রাইমোকক্সাজল দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ফলে ঘন ঘন পায়খানার সংখ্যা এবং পরিমাণ কমে আসে। ফলে IV fluid এর প্রয়োজন ও অনেক কমে আসে।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):


রোগীর শরীর ঠান্ডা বোধ হলে গরম জলের বোতল সেক দিতে হবে। রোগীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে নেই। ঘুম থেকে জাগিয়ে ওষুধ খাওয়ানো নিষেধ। রোগীর পানীয় জল সর্বদাই ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। Acute অবস্থায় গ্লুকোজের জল বরফে ঠান্ডা করে খাওয়ানো উচিত।

বমি বন্ধ হলে ফুটন্ত জল ঠান্ডা করে ORS মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ORS 5 - 7 মিনিট অন্তর অন্তর 20 - 25 ML করে খাওয়াতে হবে। একবারে বেশি করে দিলে বমির আশঙ্কা থাকে।

একটু সুস্থ হলে সুসিদ্ধ ভাত, কাঁচকলার ঝোল, সাগু, বার্লি, ফলের রস, পাতলা দুধ, হরলিক্স ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। কচি শিশুদের স্তনের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত নয়।

কলেরা রোগীর পোষাক পরিচ্ছদ, বিছানা ও শোবার ঘর ফিনাইল বা ডেটল জল দ্বারা ভালোভাবে পরিস্কার করে দিতে হবে।