পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা Health benefits of eating Guava in Bengali

সুস্বাদু ফলের মধ্যে পেয়ারা(Guava) হল অন্যতম একটি ফল। পেয়ারাকে সুস্বাদু বলা হলেও কাঁচা অবস্থায় ইহা একটু কসা হয়ে থাকে। তবে পাকলে এই কসাভাব দূর হয়ে যায়। তখন খেতে দারুন লাগে।



তবে পেয়ারা(Guava) পাকা খাওয়ার চেয়ে অনেকে কাঁচা খেতে বেশি পছন্দ করেন। কাঁচা বা ডাঁসা পেয়ারার সঙ্গে একটু নুন(Salt) বা লঙ্কা মিশিয়ে দিলে আর কোন কথাই হবে না। তবে কাঁচা খেতে গেলে মজবুত দাঁত থাকা দরকার। তাই বয়স্কদের একটু নরম পাকা পেয়ারা খাওয়াই উচিত।

পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারা পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে পেয়ারা মূলত দুই রকমের হয়ে থাকে - একটি দেশী এবং অন্যটিকে বিদেশি বা হাইব্রিড(Hybrid) বলা হয়ে থাকে। হাইব্রিড পেয়ারা ডাঁসা অবস্থায় খেতে হয় পেকে গেলে খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ে। তবে দেশী পেয়ারা কাঁচা এবং পাকা দুই রকম ভাবেই খাওয়া যায় এবং এর স্বাদ হাইব্রিডের থেকে শতগুনে ভালো।

আগে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে "প্রতিদিন একটি আপেল খান এবং ডাক্তার হইতে দূরে থাকুন"। তবে এই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। আমরা বলে থাকি "আপেল ধনী লোকের খাবার"। তাই আমরা এই কথাটা বেশি চালু করেছি যে "প্রতিদিন একটি পেয়ারা খান এবং রোগ বালাইএর হাত থেকে রেহাই পান"। কি দারুন না!

পেয়ারাকে নিউট্রিশনের একটা power house বলা যায়। কারণ ইহাতে বেশ ভালো ক্যালোরির শক্তি(Energy) বর্তমান। পেয়ারাতে বেশ ভালো পরিমাণ ফাইবার এবং প্রায় সবরকম ভিটামিনই পাওয়া যায়। যেমন - ভিটামিন A, C, B complex (B1, B2, B5, B6, B9, B12)।
এছাড়া ইহাতে বিভিন্ন মিনারেল যেমন - ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার ইত্যাদি পরিমাণ মত থাকে।


পেয়ারা কেন খাবেন? (Health benefits of eating Guava):


চোখের যত্নে (Healthy eyes):

যেকোন স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার আমাদের চোখের পক্ষে দারুন উপকারী। পেয়ারাও তেমনই একটি পুষ্টিকর ফল।
পেয়ারাতে আছে ভিটামিন C যা আমাদের দুই চোখের ওপর কোন চাপ(Stress) পড়তে দেয় না।

পেয়ারাতে আছে উচ্চমানের ভিটামিন A যা আমাদের চোখের ছানি(Cataract) এবং গ্লুকোমা প্রতিরোধ করে। পেয়ারা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি(Eye vision) বাড়ায়।

আমরা জানি ভিটামিন A এর অভাবে রাতকানা(Night blindness) হয়। পেয়ারাতে আছে উচ্চমানের ভিটামিন A যা আমাদের চোখের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
তাই আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন একটা মিডিয়াম সাইজের পেয়ারা খাওয়া উচিত।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ (Control blood pressure):

পেয়ারাতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকার জন্য ইহা রক্তনালীর অন্তপ্রাচীর পরিস্কার রাখে। যারফলে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া পেয়ারাতে যে পটাসিয়াম থাকে তা রক্তের সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়াবেটিস রোগে (Diabetes):

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পেয়ারা অন্যতম একটি পছন্দের ফল। কারণ পেয়ারাতে আছে dietary fiber যা রক্তের গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

পেয়ারা রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা সঠিক রাখে বলে আমরা ডায়াবেটিসের হাত থেকে রেহাই পায়। তাই আপনারা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকলে নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন।

রক্ত উৎপাদন (Blood production):

পেয়ারাতে আছে ভিটামিন E, B6, B5, K এবং মিনারেল যেমন - ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রণ যা আমাদের দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। পেয়ারাতে থাকে ভিটামিন C যা আয়রণ শোষণে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি (Healthy digestion):

প্রতিনিয়ত দেহে বদহজম(Indigestion) হওয়া মানে আমাদের শরীরের গঠন বা শরীর ভেঙে পড়া। কথায় বলে 'স্বাস্থ্যই সম্পদ'।

পেয়ারা আমাদের পাকস্থলীর এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে আমাদের পেটের সমস্যা দূর হয়। পেয়ারা ডায়রিয়া(Diarrhoea) বা পাতলা পায়খানার ক্ষেত্রে দারুন উপকারী।

কোষ্টকাঠিন্য (Constipation):

পেয়ারাতে আছে উচ্চমানের dietary fiber এবং ইহার বীজগুলো laxatives হিসেবে কাজ করে যার জন্য পেয়ারা আমাদের পেট পুরো পরিস্কার রাখে এবং কোষ্টকাঠিন্যের হাত থেকে রেহাই দেয়।

পেয়ারাতে dietary fiber এর পরিমাণ অন্যান্য ফলের থেকে অনেক বেশি। আমরা জানি ফাইবার যত বেশি গ্রহণ করা হবে তত আমাদের কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হবে। তাই আপনি যদি কোষ্টকাঠিন্য এ ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত পেয়ারা খান।

স্কার্ভি প্রতিরোধ (Prevent scurvy):

ভিটামিন C এর অন্যতম একটি অভাবজনিত রোগ হল স্কার্ভি। স্কার্ভি রোগে আমাদের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে।

পেয়ারাতে কমলালেবুর তুলনায় চারগুন পরিমাণ ভিটামিন C থাকে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে স্কার্ভি রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সর্দি - ঠান্ডাতে (Cough & cold):

পেয়ারাতে আছে ভিটামিন C এবং আয়রণ যা আমাদের দেহের immunity system কে শক্তিশালী করে আমাদের সর্দি ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে।

অপরিণত পেয়ারা বা পেয়ারা পাতার রস সর্দি ঠান্ডায় দারুণ উপকারী। পেয়ারা পাতা এবং জল একসাথে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে খেলে সর্দি ঠান্ডা উপশম হয়।

ত্বকের যত্নে (Skin care):

বাজারজাত সব বিউটি প্রোডাক্ট এর চেয়ে পেয়ারা আমাদের ত্বকের খেয়াল ভালো রাখে। পেয়ারাতে আছে ভিটামিন C এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা(Glowness) ধরে রাখে। ত্বকের কুঁচকানোভাব(Wrinkle) দূর করে। আমাদের বয়স বাড়তে দেয় না।