শিশুদের হামের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Measles - It's Causes, Symptoms & Treatment in Bengali

হাম(Measles) হল শিশুরোগ গুলির মধ্যে অন্যতম একটি জ্বালাময় রোগ। ইহা একটি ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ। ইহা সর্দি জ্বর এবং ঘামাচির ন্যায় এক প্রকার লাল বর্ণের গুটি(Rash) সহ প্রকাশ পায়।



এই গুটি(Rash) গুলি একসঙ্গে মিলে অসমান দলে পরিণত হয়। আবার অনেক সময় অর্ধচন্দ্রাকৃতির মত সজ্জিত হতে দেখা যায়। এই রোগে জ্বর অবিরাম অবস্থায় থাকে। ইহা শীতকালে(Winter) এবং বসন্তকালে(Spring time) বেশি হতে দেখা যায়।


হামের কারণ (Causes of measles):


ইহা একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের জীবাণুর নাম হল কক্কাস রুবেলী (Coccus Rubeloe) যা Togavirus পরিবারভুক্ত। এই জীবাণু রোগীর স্বাস প্রশ্বাস, নাসাস্রাব এবং অশ্রুর (Eye water) দ্বারা চারিদিকে ছড়ায়। এই জন্য রোগীর কাছাকাছি থাকলে সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে।

অনেক সময় আমাদের ধারণা থাকে যে একটি শিশুর একবার হাম হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার তার আর হাম হয় না। কিন্তু এই ধারণা সবসময় সত্যি হয় না। কোন কোন শিশুর 2 - 3 বার হাম হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাধারণত 10 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে 6 মাস থেকে 5 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সংক্রামিত হতে বেশি দেখা যায়।

শিশুর দেহে গুটি গুলি যখন বের হয় তখন এই রোগ অতি সংক্রামক হয় এবং গুটি গুলি সব বেরিয়ে যাবার পর ইহা কমজুরি হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণ ক্ষমতা লোপ পায়।

হামের লক্ষণ (Symptoms of measles):


1. প্রথমে ভয়ানক সর্দি, শীত শীত বোধ, নাক থেকে সর্দি ঝরে, চোখে জলের উপস্থিতি, সারা মুখ থমথমে দেখায়, সমস্ত শরীরে বেদনা হয়।

2. জ্বর শুরু হওয়ার তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে হামের গুটি গুলি দেখা দেয়। জ্বর প্রথমে কম থাকে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জ্বর হওয়ার পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনে হাম সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে পড়ে। গুটি গুলি বের হয়ে যাওয়ার পর জ্বর কমতে থাকে। শিশুর শরীরে সর্বদা জ্বালা এবং অস্বস্তিকর ভাব থাকে।

3. আট থেকে নয় দিনের মধ্যে হাম রোগের সমস্ত গুটি(rash) সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে যায়। অনেকসময় হামের গুটি হঠাৎ মিলিয়ে যায় এবং নানা উপসর্গ দেখা যায়। যেমন - নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, কর্ণপ্রদাহ (Mumps) ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয় (Diagnosis):


1. সাধারণত শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

2. জ্বর, সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে জল ঝরা, প্রচন্ড শুষ্ক কাশি(Dry cough), ফারিংজাইটিস, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি।

3.  জ্বর হওয়ার তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে হামের গুটির আবির্ভাব।

4.  সেরোলজিক টেস্ট দ্বারা এই রোগ ধরা যায়।

5. প্রথম দিকে blood count এ লিউকপিনিয়া থাকে। পরের দিকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা যায়। তবে লিউকোসাইটোসিস দেখা যায়।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):


প্রথম দিকে শিশুকে কিছু মিষ্টদ্রব্য খাওয়ানো ভালো। এরফলে গুটি নির্গমনে সাহায্য হয়। এই অবস্থায় তরল খাদ্য খাওয়ানো ভালো। জ্বর ছেড়ে গেলে সিদ্ধ ভাত, চারা পোনার ঝোল, সিদ্ধ ডিম, ঘি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে।

রোজ গরম জলে রোগীর গা হাত স্পঞ্জ করতে হবে। স্পঞ্জের সময় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে। রোজ ভোরবেলায় মৌরি ও তালমিছড়ি ভেজানো জল রোগীকে খেতে দিতে হবে। এতে রোগীর পেট ঠান্ডা থাকে।

শিশুকে 10 - 15 দিন পৃথক ঘরে বিশ্রামে রাখতে হবে। দীর্ঘদিন হাম এবং ফুসফুসের রোগে ভুগলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সঙ্গে পুষ্টিকর পথ্য, বিশ্রাম ও ভিটামিন না পড়লে স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়।

প্রথম দিকে শিশুকে হরলিক্স, কমপ্লান, দুধ, সাগু, ফলের রস দিতে হবে। জ্বর কমলে টোস্ট, পাতলা সুপ, ছানা বা সন্দেস, আলু সেদ্ধ প্রভৃতি দেয়া যায়। যদি উদরাময়(Cholera) থাকে তবে দুধ দেওয়া নিষিদ্ধ। তার বদলে ডাবের জল, বার্লি, ছানার জল ইত্যাদি দিতে হবে।

রোগীর সংস্পর্শে যারা আসবে তাদের 10 - 15 দিন পৃথক ঘরে রাখতে হবে এবং 5 বছরের নিচের শিশুদের রোগীর সংস্পর্শে আসতে দেওয়া যাবে না। যারা হামের সংস্পর্শে আসবে তাদের exposure এর দু দিনের মধ্যে হামের লাইভ ভ্যাকসিন নিলে রোগের ভয় থাকে না। তবে সর্দি জ্বরে ভুগলে, গর্ভবতী মায়েদের এই টীকা নেওয়া নিষিদ্ধ।