রক্তাল্পতার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা Anaemia - It's Causes, Symptoms & Treatment in Bengali

আনিমিয়া(Anaemia) বা রক্তাল্পতা  প্রকৃতপক্ষে কোন রোগ নয়, প্রকৃতপক্ষে এটি দেহের বিভিন্ন রোগ এবং গোলযোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। সুতরাং কোন রোগীর শরীরে আনিমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে অনুসন্ধান করে জানতে হবে দেহের অভ্যন্তরে কি জাতীয় রোগ বা গোলযোগের পরিণাম। কারণ রক্তাল্পতা হচ্ছে ওই রোগ বা গোলযোগের পরিণাম।



রক্তাল্পতার কারণ (Cause of Anaemia):


রক্তাল্পতার (Anaemia) পিছনে বিভিন্ন কারণ লুকিয়ে থাকে। যেমন - ভিটামিন B12 অর্থাৎ সায়ানকোবালামিন এবং ভিটামিন B6 অর্থাৎ ফলিক এসিডের অভাবে আনিমিয়া তথা রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া লৌহ ঘটিত (Iron) খাদ্যের অভাব, দীর্ঘদিন রোগ ভোগ প্রভৃতি থেকেও এই রোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও হঠাৎ কোন কারণে অতিরিক্ত রক্তপাত হলেও এটা হতে পারে। সদ্যজাত শিশুর অবশ্য বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে এবং মায়ের স্বাস্থ্যগত ত্রুটির জন্য শিশুদের মধ্যে ইহার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

তবে প্রধানত তিনটি কারণই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগ লক্ষণ সৃষ্টির মূলে থাকে। আমাদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা(RBC) অথবা হিমোগ্লোবিন(HB) পরিমাণ কমে গিয়ে এই রোগ সৃষ্টি হতে পারে। Haemorage বা রক্তক্ষয় জনিত অবস্থা সৃষ্টি হলে বা যদি রক্তের RBC বেশি করে বা দ্রুত ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং রক্ত সৃষ্টিকারী পদার্থের ঘাটতির জন্য যদি রক্তের উপাদান কমে যায় বা রক্ত সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে।

রক্তাল্পতার লক্ষণ (Symptoms of Anaemia):


1. চোখের ভিতরের নিচের অংশ এবং ঠোঁটের ভিতরের দিক ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

2. চোখ জ্বালা করে, বুক ধড়ফড় করে, শরীর দুর্বল হয়ে যায়।

3. রোগীর খিদে হয় না, কিছু খেতে চায় না। খাবার দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

4. শ্বাসকষ্ট দেখা যায়, হাত পা ও শরীর ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, গা ঠান্ডা বা শীতল থাকে।

5. হৃদপিণ্ডের ক্ষীণ গতি, মাথা ব্যথা, ঠোঁটে ঘা, উদাসীন ভাব, খিটখিটে স্বভাব ইত্যাদি।

6. সামান্য কারণেই রোগের আক্রমণ, অতি সহজেই জীবাণু সংক্রমণ ঘটে, স্নায়ুর রোগ ইত্যাদি দেখা যায়।

7. পায়ে এবং মুখমণ্ডলে শোথ ভাব, ক্ষত হলে সহজে শুকাতে চাই না। আঙুলের অগ্রভাগ টিপলে রক্তহীনতার লক্ষণ প্রকট হয়ে ওঠে।

রোগ নির্ণয় (Diagnosis):


Anaemia এর কারণ জানার জন্য laboratory test তথা রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন এবং ইহা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তের TC, DC বা ESR এবং রক্তে parasite আছে কিনা তা অনুসন্ধান করা। এছাড়া সিরাম আয়রণ এবং আয়রণ বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি টেস্ট করা দরকার এবং প্রয়োজনে Bone marrow aspiration ও Biopsy করার দরকার হতে পারে।

চিকিৎসা (Treatment):


1. সাধারণত অপুষ্টির জন্য যদি anaemia হয়ে থাকে তবে Iron tablet, ভিটামিন B complex সিরাপ খাওয়াতে হবে।

2. Iron ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে কোন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পথ্য (Supporting measures & diet):


হেমারেজিক কেস হলে রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। গুরুতর কেসে রোগীকে মুখে কোন কিছু খাওয়ান চলবে না। গুরুতর কেস না হলে liquid পথ্য যত দিতে হবে।

রক্তক্ষরণ বন্ধ হলে এবং রোগীর অবস্থা উন্নতি হলে তখন আয়রণ ঘটিত ওষুধ মুখে খাইয়ে দিতে হবে। যেসব খাদ্যে আয়রণ অর্থাৎ লৌহ অধিক পরিমাণে আছে তা খেতে দিতে হবে।

ভিজা ছোলা, মটর সিদ্ধ, মুসুর ডাল প্রভৃতি খেতে দিতে হবে। পালং শাক, নোটে শাক, কুলে খাঁড়া, ডুমুর, কাঁচকলা, থানকুনি, মাগুর মাছ সহ অন্যান্য মাছ খেতে দিতে হবে। ডিম, কাঁচা টম্যাটো, বেদানা, আঙুর, আপেল প্রভৃতি দেওয়া যায়।