ব্রণ (Acne) হল আধুনিক সময়ের ছেলে বা মেয়েদের কাছে একটি আতঙ্কের বিষয়। এগুলি মূলত Teenage, Adolescent বা কখন কখন প্রাপ্ত বয়স্ক (Adult) দের মধ্যে দেখা যায়।
ব্রণ (Acne) মূলত আমাদের মুখমন্ডল (Face), গলায়, ঘাড়ে, পিঠে প্রভূতি জায়গায় বেশি হতে দেখা যায়। তবে আমাদের মুখমন্ডলে এটি হলে তা খুবই বিপদজনক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল দাগ সৃষ্টি করে যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপনে নানা রকম অসুবিধার সৃষ্টি করে।
আমাদের ত্বকের উপরিভাগে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্র গুলি দিয়ে আমাদের ত্বকে থাকা ঘর্মগ্রন্থি (Sebacious gland) থেকে অনবরত তৈল বা sebum বেরিয়ে আসে।
এখন যদি কোন কারণে এই ছিদ্র গুলির মুখ বন্ধ হয়ে যায় তবে ভিতরের sebum বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে আমাদের ত্বকে ব্রণ বা ফুসকুড়ির মত সমস্যার সৃষ্টি হয়। মুখের ব্রণতে যদি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ (Bacterial infections) ঘটে তাহলে সেই জায়গাগুলিতে বিশ্রী রকমের দাগের সৃষ্টি হয় যা দেখতে খুবই খারাপ লাগে।
এছাড়া দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগলে, বাচ্চা প্রসবের পর (After pregnancy or delivery) ইত্যাদির জন্যও ব্রন হতে পারে।
দেহে ব্রণের সৃষ্টি হলে তা সহজে ভালো হতে চাই না। তাই ব্রন যাতে না হয় সেই দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ব্রণের হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাবেন তা নিচেই আলোচনা করা হল।
ব্রণ সমস্যা কিভাবে দূর করবেন? (How to get ride from Acne problems?):
যোগব্যায়াম (Exercise):
আমাদের বর্তমান অলস জীবনযাপন রোগ সৃষ্টির একটি মূল কারণ। প্রতিদিন যদি 30 মিনিট হাঁটাচলা করা হয় বা সাধারণ যোগব্যায়াম করা হয় তবে তা শরীরের পক্ষে বা ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী।
যোগব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে যায়। এছাড়া এরফলে আমাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ঘুম ভালো হয়। ফলে ব্রণ সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
প্রচুর জলপান করা (Drinking water):
আমাদের প্রতিদিন নিয়মিত 8 গ্লাস জলপান করা উচিত। এতে আমাদের শরীরের জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। এছাড়া প্রচুর জলপানের ফলে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে যায়।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ (Healthy foods):
পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য (Balance diet) খেলে ব্রণ সমস্যা দূরে থাকে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শর্করা (Carbohydrates), সুগার বা ফ্যাট জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে বেশি করে শাকসবজি বা ফল খাওয়া উচিত।
মুখ পরিষ্কার রাখা (Clean your face):
মুখে যাতে ব্রণ সমস্যা না হয় সেজন্য প্রতিদিন মুখমণ্ডল সাধারণ সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দিনে দুইবার ধুলেই হবে। এর বেশি না ধোয়ায় দরকার। তাতে আমাদের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
কিছু ঘরোয়া টিপস (Some useful home remedies):
মধু (Honey):
মধুতে জীবাণু ধ্বংসকারী (Antibiotics) কিছু উপাদান থাকে যেগুলি আমাদের মুখে থাকা ব্যাক্টেরিয়া গুলি ধবংস করে। ফলে ব্রণের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়া গুলি মারা পরে।
এক চা চামচ খাঁটি মধু নিয়ে তা সরাসরি মুখমন্ডলে লাগিয়ে রাখুন। এরপর 30 মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এইরকম সপ্তাহে 3 - 4 দিন করুন। উপকার পাবেন।
পুদিনা পাতা (Mint):
আমাদের ত্বকের ছিদ্র গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য তৈল গ্রন্থির তৈল বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে ব্রণর সৃষ্টি হয়।
পুদিনা পাতা ত্বকের ছিদ্র গুলি বন্ধ হতে দেয় না। ফলে ব্রণ হয় না।
কতগুলি পুদিনা পাতা বেঁটে সেটির সঙ্গে দই (Yogurt) মিশিয়ে সারা মুখে মাখুন। এরপর 10 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে কিছুদিন করলে ব্রণ ভালো হয়ে যায়।
এলোভেরা (Aloe vera gel):
ব্রণ ভালো করার একটি কার্যকারী এবং শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান হল এলোভেরা জেল। আলোভেরাতে anti-inflammatory এবং anti-bacterial উপাদান থাকার জন্য ইহা ব্রণ সমস্যা দূর করার জন্য খুবই উপকারী।
একটি এলোভেরা পাতা নিয়ে চুরি দিয়ে ভিতরের জেল চেঁছে নিতে হবে। তারপর সেই জেল আঙুল দিয়ে ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। এইভাবে সারারাত লাগিয়ে রেখে পরেরদিন সকালে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন করলে ব্রণ উধাও হয়ে যাবে।
লেবুর রস (Lemon):
পাতিলেবুর রসে জীবাণু ধ্বংসকারী ক্ষমতা বর্তমান। ব্রণ সমস্যা দেখা দিলে একটু পাতিলেবুর রস নিয়ে তা তুলো দিয়ে ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। তারপর 10 মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
টুথপেস্ট (Toothpaste):
আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে টুথপেস্ট আছে। এই টুথপেস্ট যে ব্রণ ভালো করতে পারে এটা হয়তো খুব কম জনেই জানে। বিশেষ করে সাদা টুথপেস্ট।
রাতের বেলায় সাদা টুথপেস্ট একটু নিয়ে তা ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। সারারাত এইভাবে লাগিয়ে রাখার পর পরের দিন সকালে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে দেখবেন ব্রণ কয়েকদিন পর মিলিয়ে যাবে।
তুলসী পাতা (Basil leaves):
ত্বকের infections দূর করার একটি প্রাকৃতিক উপাদান হল তুলসী পাতা।
মুখে ব্রণ বের হলে তুলসীর রস লাগাতে পারেন।
কয়েকটি তুলসী পাতা জলে ভিজিয়ে রেখে সেগুলি বেঁটে রস বের করতে হবে। তারপর সেই রস ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় সারারাত লাগিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে কয়েকদিন করতে হবে।
নিম পাতা (Neem leaves):
ব্রণ ভালো করার সর্বশেষ একটি মহামূল্যবান প্রাকৃতিক উপাদান হল নিম পাতা।
নিম পাতা হল antifungal, antibacterial, antiinflammatory এজেন্ট যা আমাদের ত্বকের যেকোন সমস্যা দূর করতে কার্যকারী।
কতগুলি নিম পাতা জলে ভিজিয়ে রেখে সেগুলি বেঁটে পেস্ট করে নিয়ে ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। তারপর 30 মিনিট পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে 3 দিন করলেই ব্রণ ভালো হয়ে যাবে।