চুল পড়া কিভাবে রোধ করবেন? How to stop Hair Fall in Bengali?

মাথা ভর্তি ঘন, কালো সুন্দর চুল কে না চাই? আসলে মাথায় ঘন কালো চুল থাকলে যেন নিজের আত্মবিশ্বাস (Self confidence) ফিরে পাওয়া যায়। মাথা ভর্তি চুল যেন যৌবনের আর এক নাম। কিন্তু এই চুল যদি পড়ে যেতে থাকে? বর্তমান সময়ে চুল পড়ে(Hair fall) যাওয়া যেন একটা common ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।


চুল পড়ার কারণ (Causes of Hair falling):

চুল পড়ে যাওয়ার পিছনে আছে হাজারও কারণ। তার মধ্যে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরা হল।
যেমন -  আমরা যে পরিবেশে বসবাস করি সেখানকার আবহাওয়া হয়তো আমাদের চুল সুট (Suit) করতে পারছে না, আমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে সেই কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে, আমরা প্রতিদিনের জীবনে অহেতুক নানান চাপ (Stress) নিয়ে ফেলি, ফলস্বরূপ আমাদের চুল পড়ে যেতে থাকে।

অতিরিক্ত ধূমপান করা, পুষ্টির অভাব, hormonal imbalance, বংশগত কারণ, চুলে কেমিক্যাল মিশ্রিত তেল, হেয়ার ডাই, shampoo প্রভৃতি ব্যাবহার ইত্যাদি কারণে চুল পড়ে যেতে পারে।
এছাড়া কিছু রোগ যেমন- থাইরয়েড সমস্যা, আয়রণ অভাব, রক্তাল্পতা (Anaemia), দীর্ঘদিন অসুস্থ্যতার কারণেও আমাদের চুল পড়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হল এই চুল পড়া কীভাবে রোধ করবেন?  নীচেই কিছু কার্যকারী টিপস দেওয়া হল।


চুল পড়া কিভাবে রোধ করবেন? (How to prevent hair fall?):


1. ডায়েট এবং ব্যায়াম:

আমাদের প্রতিদিন সুষম খাদ্য খেতে হবে। সুষম খাদ্য বলতে মূলত আয়রণ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন- দুধ, মাছ, ডিমের সাদা অংশ, শাকসবজি ইত্যাদি।
সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কিছু হালকা যোগাসন করা, মাথার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা ইত্যাদি করতে হবে।

2. প্রচুর জলপান করা:

আমাদের গ্রীষ্মকালেই বেশি চুল পড়তে দেখা যায়। যার একটা কারণ হল আমাদের ঘামের সাথে প্রচুর জল, লবণ বেরিয়ে যায়। প্রতিদিন 7 - 8 লিটার জলপান করা আবশ্যিক। তাতে আমাদের দেহের জলসাম্য বজায় থাকে।

3. এলোভেরা (Aloe vera) প্রয়োগ:

এলোভেরা চুল পড়া এবং চুল গজাতে খুবই উপকারী। এছাড়া এলোভেরা মাথার স্কাল্পের চুলকানি ও খুশকি দূর করতে দারুন কাজ করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- প্রথমে একটি এলোভেরা পাতা কেটে ছুড়ি দিয়ে ভিতরের জেল বের করে নিতে হবে।
- এরপর সেই জেল হাতে নিয়ে সারা চুল এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।
- এরপর প্রায় 45 মিনিট রেখে কোন ভালো shampoo দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
- তাড়াতাড়ি ফল পেতে এই পদ্ধতি সপ্তাহে 3 - 4 দিন করতে হবে।

4. আমলকি (Amla):

চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পেকে যাওয়া রোধ করতে আমলকির কোন জুড়ি নেই। আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে Vitamin C এবং Antioxidant যার অভাব হলে আমাদের চুল পড়ে যেতে থাকে।
আমলকি কাঁচাও খাওয়া যায় বা আমলকি পাউডার চুলেও লাগানো যায়।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- আমলকি পাউডার ও পাতিলেবুর রস একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে।
- লাগানোর পর সেটা সারারাত রেখে দিয়ে সকালে shampoo করতে হবে।
- এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুইদিন করতে হবে।

5. পেঁয়াজের রস (Onion juice) প্রয়োগ:

পেঁয়াজে বিশেষ করে লাল পেঁয়াজে উচ্চমানের সালফার থাকার জন্য তা আমাদের মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন করে চুল গজায়। এছাড়া পেঁয়াজে antibacterial উপাদান থাকায় তা চুলের খুশকি প্রতিরোধ করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- প্রথমে পেঁয়াজ থেকে রস বের করে তা মাথার চুল এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।
- এরপর প্রায় 30 মিনিট পর ধুয়ে ফেলে shampoo করতে হবে।
- এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুইদিন করতে হবে।

6. চুলে তেল দেওয়া (Oiling):

আজকাল young generation দের মধ্যে চুলে তেল না দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে আমাদের চুল ঠিক মত পুষ্টি পায় না এবং চুল পড়ে যেতে থাকে।

মাথায় নারকেল বা আমলা তেল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর সারারাত রেখে সকালে shampoo করে ফেলতে হবে। এতে চুলও তেলমুক্ত হয় এবং চুল পুষ্টিও পায়।

7. সবুজ চা (Green tea) ব্যবহার:

Green tea তে আছে antioxidant যা চুলে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিয়ে চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- 3 - 4 টি green tea ব্যাগ নিয়ে তা গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
- সেই জল ঠান্ডা হলে মাথায় হালকা ম্যাসাজ করতে হবে।
- তারপর আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।


স্বাস্থ্যবান চুলের জন্য ডায়েট


1. গাজর (Carrots):

Vitamin A এর একটি মূল উৎস হল গাজর।
নিয়মিত গাজর খেলে আমাদের স্কাল্পের চুলকানি এবং শুষ্কভাব দূর হয়। গাজর চুলে vitamin A এর যোগান দেয়, ফলে চুল পড়া রোধ হয়। এছাড়া গাজরে আছে antioxidant যা আমাদের চুলের স্বাভাবিক ঘনত্ব বজায় রাখে, চুল পাকা এবং চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করে।

2. আমলকি (Amla):

আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে vitamin C এবং antioxidant যা চুল পড়া, অকালে চুল পাকা, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দূর করে।
প্রতিদিন দুটি মাঝারি সাইজের আমলকি খেলে আমাদের দেহের প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয় এবং আমাদের চুলও স্বাস্থ্যবান থাকে।

3. পালংশাক (Spinach):

আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার একটা মূল কারণ হল দেহে আয়রনের ঘাটতি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ পাওয়া যায়। শুধু আয়রণ নয় পালংশাকে আছে ভিটামিন A, C এবং ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম যা চুল পড়া, চুলের বৃদ্ধি প্রভূতিতে দারুন কার্যকারী।