নিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা Health benefits of Neem in Bengali

প্রকৃতি মা আমাদেরকে যতগুলি মহৌষধি গাছের উপহার দিয়েছেন তাদের মধ্যে নিম (Neem) হল অন্যতম। সেই প্রাচীন কাল থেকেই নিম আমাদের দেশের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রাণ।
প্রায় সব রোগের চিকিৎসায় নিম ব্যবহার করা হয়।



নিমের পাতা, ছাল, ফল, ফুল, মূল অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে সমস্ত নিম গাছটাই একটা ওষুধের কারখানা। তবে মূলত নিমের পাতা, ছাল এবং বীজ বেশি ব্যবহৃত হয়।


নিমের কিছু উপকারী দিক (Some useful benefits of Neem):


ফাঙ্গাস ইনফেকশন (Fungal infections):

আমাদের শরীরে ফাঙ্গাসের আক্রমণ ঘটলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। নিমের মধ্যে antifungal element থাকার জন্য ইহা ফাঙ্গাস আক্রমণ প্রতিরোধ করে।

ফাঙ্গাসের আক্রমণ আমাদের ফুসফুস(Lungs), bronchus প্রভৃতি দারুন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিম এই রোগগুলি প্রতিরোধ করে।
ফাঙ্গাসের আক্রমণে আমাদের চুল ও ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা নিমের ব্যবহারে উপশম হয়।
সুতরাং বলা যায় ফাঙ্গাস সংক্রান্ত সমস্ত রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল নিম।

রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ (Control blood sugar):

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নিমের পাতা এবং বীজের তেল রক্তের সুগার কন্ট্রোল করে। তাই আপনাদের যদি সুগারের সমস্যা থেকে থাকে তবে নিয়মিত নিমের পাতা খান।

রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে (Blood purifier agent):

আমরা সবাই জানি রক্ত পরিষ্কারের জন্য নিমের জুড়ি আর নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে ইহা আমাদের রক্ত পরিস্কার করে আসছে।
নিম আমাদের রক্তের ক্ষতিকর পদার্থগুলিকে মলমূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে বের করে দেয়। ফলে আমাদের vital organ গুলি ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ (Control Blood pressure):

উচ্চ রক্তচাপ(Hypertension) আমাদের দেহের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এরফলে আমাদের কিডনি বা হার্ট ফেল করতে পারে। নিম আমাদের রক্তবাহের প্রসারণ ঘটিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

স্ট্রোক প্রতিরোধ (Prevent stroke):

স্ট্রোকের একটি বড় কারণ হল আমাদের রক্ত smooth ভাবে ব্রেনে (Brain) চলাচল করতে না পারা। রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।

নিম রক্তনালীর ভিতরের প্রসারণ ঘটিয়ে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইদের বিনিময়ে(Exchange) সাহায্য করে। ফলে আমরা স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পাই।

লিভারের যত্নে (Protect liver):

লিভার বা যকৃৎ হল আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আমরা প্রতিদিন যেসব ওষুধ খাই তা প্রথমে লিভার দিয়ে পাস হয়। এইসব ওষুধের টক্সিন পদার্থ গুলি লিভারে জমা হতে থাকে। দেহে টক্সিন বেশি হয়ে গেলে লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরফলে আমাদের দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হয়।

নিয়মিত নিমপাতা বা নিমের রস খেলে লিভার থেকে টক্সিন গুলি বেরিয়ে যায় এবং লিভার সুস্থ থাকে।

বাতের ব্যাথা (Arthritis):

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাতের ব্যাথা যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে।
নিমের বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা দিয়ে নিয়মিত মালিশ করলে বাতের ব্যাথা উপশম হয়। এছাড়া এই তেল ত্বকের চুলকানিও দূর করে।

চোখের যত্নে (Eye care):

ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাসের ইনফেকশন হলে আমাদের চোখে নানান বাহ্যিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
একটি পাত্রে নিম পাতা এবং জল মিশিয়ে গরম করে সেই জল ঠান্ডা করে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এরফলে চোখের চুলকানি বা জয় বাংলা(conjunctivitis) দূর হবে।

পেটের গন্ডগোল (Gastric problem):

পাকস্থলীতে আলসার হলে বা জীবাণুর আক্রমণ ঘটলে আমাদের পেটে গ্যাস, অম্বল, পেটে যন্ত্রণা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। নিমপাতার রস নিয়মিত সেবন করলে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কৃমিনাশক হিসেবে (Healing intestinal worm):

কৃমি সমস্যায় যারা ভোগেন বিশেষ করে শিশুরা, তাঁদের ক্ষেত্রে নিম পাতা মহৌষধ।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা চিবিয়ে খেলে কৃমিনাশ হয়। অথবা নিমপাতা জল ফুটিয়ে সেই জল খালি পেটে খেলে কৃমিনাশ হয়।

মশা পিঁপড়ে কামড়ালে (Insect bite):

দেহের কোন জায়গায় মশা বা পিঁপড়ে কামড়িয়ে দিলে নিমপাতা বেঁটে সেই জায়গায় লাগিয়ে দিন। জ্বলন(Inflamation) কমে যাবে। এছাড়া নিমপাতা শুকিয়ে পোড়ালে সেই ধোঁয়ায় মশারা পালিয়ে যায়।

ব্রণ ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধ (Cure Acne & pimples):

নিমে আছে antibacterial element যা ত্বকের ব্রণ বা ফুসকুড়ি হতে বাঁধা দেয়। এছাড়া ত্বকের কালো দাগ পরিস্কার করে।

একটি হাঁড়িতে জল ও কিছু নিমপাতা নিয়ে ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ না জলের রং সবুজ হয়। এরপর সেই জল দিয়ে স্নান(Bath) করুন। সারা গায়ের ব্রণ ভালো হয়ে যাবে।

অথবা কিছু নিমপাতা নিয়ে ভালো করে বেঁটে পেস্ট করে নিন। তারপর সেই পেস্টটি মুখের ব্রণ বা ফুসকুড়িতে লাগান।
30 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ব্রণগুলি ধীরে ধীরে বসে যাবে।

চুলের যত্নে (Hair care):

আপনার কি চুল পড়ে যাচ্ছে ? বা মাথায় খুসকি আছে? নাকি মাথা সবসময় চুলকায়?
তাহলে তার একমাত্র সমাধান নিম। নিমে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল এলিমেন্ট যা স্কাল্পে খুসকি এবং চুলকানি দূর করে।

একটি পাত্রে জল ও একমুঠো নিমপাতা নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন যতক্ষণ না জল সবুজ হয়ে যায়। তারপর সেই জল হালকা গরম থাকা অবস্থায় সমস্ত চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া বা খুসকি সমস্যা দূর হবে।

নিমপাতা রোদে শুকিয়ে নিয়ে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। তারপর সেই তেল ছেঁকে নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিন এবং নিয়মিত ব্যবহার করুন। চুলের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।