হাঁপানি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় Natural remedies for Asthma

হাঁপানি (Asthma) আমাদের শ্বাসতন্ত্রের একটি খুবই বিরক্তিকর রোগ। এটি আবার মৃত্যুহানিকারকও বটে। কারণ ইহা যেকোনো সময়ে রোগীর জীবন ছিনিয়ে নিতে পারে। হাঁপানি যে কতটা কষ্টকর রোগ এটা একমাত্র হাঁপানি রোগীই বলতে পারবেন। কেউ যদি জলে ডুবে মারা যায় তখন তার যেরকম শ্বাসকষ্ট হয়, ঠিক একইভাবে হাঁপানি রোগীদেরও জীবনহানিকর শ্বাসকষ্ট চলতে থাকে।




হাঁপানি কি বা কাকে বলে? - এই প্রশ্নের উত্তর যদি দিতে হয় তবে খুব সহজ ভাষায় এটা বলতে পারি যে, আমাদের শ্বাসনালী (Trachea) দুটি শাখায় ভাগ হয়ে দুটি ফুসফুসে (Lungs) প্রবেশ করেছে। এই শাখা আবার ফুসফুসের মধ্যে অনেক গুলি শাখায় ভাগ হয়ে যায়। এই শাখাগুলো দেখতে অনেকটা নল বা পাইপের মত যার ভিতর দিকটা ফাঁপা থাকে। এই ফাঁকা জায়গার মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করে অর্থাৎ অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিনিময় হয়। এখন হাঁপানি রোগীদের (Asthma patient) এই নল গুলো চুপসে যায় এবং যার ফলে স্বাস নিতে কষ্ট হয়, তখনই তাকে হাঁপানি বলে ধরা হয়।

হাঁপানির কারণ হিসেবে বলা যায়, এটি মূলত বংশগত রোগ। তবে আমাদের প্রতিদিনের লাইফস্টাইলও এর জন্য দায়ী। হাঁপানি ধূমপায়ীদের বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়া ধুলো ধোঁয়ায় কাজ করা শ্রমিকদের, আমরা যারা প্রতিদিন কাজের তাগিদে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়, নিজের ইচ্ছায় ঠান্ডা লাগানো ইত্যাদির জন্যও হাঁপানি শুরু হয়।



হাঁপানি শুরু হলে কি করবেন? (How to deal with the effects of Asthma):


1. সবসময় ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ আপনার পকেটে রাখুন এবং প্রয়োজন হলে ব্যবহার করুন।

2. যেহেতু ধূমপায়ীদেরই হাঁপানি বেশি হয়, তাই আজ থেকেই বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা ইত্যাদি নেশা ছেড়ে দিন এবং এর বিকল্প কিছু ব্যবহার করুন। এর জন্য কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

3. কিছু কিছু খাবার খেলে হাঁপানি বেশি হয়। আপনি যদি হাঁপানিতে ভুগে থাকেন তাহলে নিজের দায়িত্বে সেইসব খাবারগুলো চিহ্নিত করুন এবং খাবারগুলো যতদূর সম্ভব বর্জন করুন।

4. শীতকাল, বর্ষাকাল ইত্যাদি কয়েকটি ঋতুতে হাঁপানি বেড়ে যায়। তাই ওই ঋতুগুলিতে আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে। ঠান্ডা যাতে না লাগে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

5. সবসময় চেষ্টা করুন হালকা গরম খাবার খেতে বা পোশাক পরতে, যাতে আপনি নিজেকে কমফোর্ট বোধ করেন।

6. মানসিক চিন্তা ভাবনা (Mental stress) কম করুন। কারণ এটি হাঁপানির একটি কারণ।

7. ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম, যোগাসন করুন। এইগুলো হাঁপানি নিরাময়ে সাহায্য করে।



হাঁপানি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় (Natural remedies for Asthma):


মনে রাখবেন, হাঁপানির কিন্তু কোন স্থায়ী চিকিৎসা (Permanent treatment) নেই। এটা ভাববেন না যে, একবার ওষুধ খেয়ে নিলাম মনে সারা জীবনের মত আমার হাঁপানি ভালো হয়ে গেল। এখানে কিছু ঘরোয়া উপায়ের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। এগুলি মেনে চলুন, দেখবেন আপনার হাঁপানি অনেকটা হাতের মুঠোয়।




1. হাঁপানিতে কার্যকরী যোগাসন, প্রাণায়াম ইত্যাদি বাড়িতে প্র্যাকটিস করুন। এরজন্য কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

2. যেসব ঋতুতে হাঁপানি বাড়ে অর্থাৎ শীতকাল ও বর্ষাকালে প্রতিদিন গরম জলে স্নান করতে হবে।

3. সরষের তেলের সাথে রসুন মিশিয়ে ভালো করে ওই তেল ফুটিয়ে নিতে হবে। এই তেল দিয়ে নিয়মিত বুকে মালিশ করুন এবং সারা গায়ে মেখে রোদের মধ্যে শুয়ে থাকুন।

4. এক বাটি জল, আদার টুকরো এবং কয়েকটি তুলসীর পাতা একসাথে মিশিয়ে সেই জল ফুটিয়ে নিন। এই আদা জল সকাল সন্ধ্যায় চা এর মত পান করুন।

5. ভাত, চিনি, ঠান্ডা পানীয় অর্থাৎ যেগুলো হাঁপানি বাড়িয়ে দেয় সেগুলো খাওয়া বন্ধ করুন।

6. সবশেষে বলি, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন, স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। দেখবেন আপনার কাছে হাঁপানি একটা তুচ্ছ ব্যাপার বলে মনে হবে।