আজকের ব্যাস্ততম জীবনে আমাদের সকলের পক্ষে জিমে গিয়ে জিম করার মতো সময় হাতে নেই। যারা যাচ্ছেন তেনারা ফিট থাকছেন। আর বাকিরা অসুস্থতায় ভুগছেন। তাই যাদের হাতে সময় খুব কম তারা প্রতিদিন সকালে অন্তত 30 মিনিট মর্নিং ওয়াক (Morning walk) করতে পারেন। এরফলে আপনার শরীর ও মন দুটোই ফিট থাকবে। কাজে আসবে উৎফুল্ল মনোভাব। দিনের শেষেও আপনি থাকবেন পুরোপুরি ফিট। চলুন দেখে নেওয়া যাক মর্নিং ওয়াকের (Morning walk) কিছু উপকারী দিক।
মর্নিং ওয়াকের উপকারিতা(Benefits of Morning Walk)
ডায়াবেটিস(Diabetes):
আজকের দিনে জীবনযাত্রার ধরন এতটাই খারাপ যে, ডায়াবেটিস বয়স মানছে না। 30 বছরের যুবক বা 50 বছরের মধ্যবয়সী - আজ সবাই ডায়াবেটিসের কবলে। যাদের ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, তাদের রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ করাই একমাত্র লক্ষ্য। রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে হাঁটাহাটির কোন বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত হাঁটাহাটি করেন তাদের ইনসুলিনের আর প্রয়োজন হচ্ছে না।
ব্লাড প্রেশার( Blood pressure):
আজকের দিনে উচ্চরক্তচাপে (Hypertension) ভুগছেন না এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গুনে কয়েকটা হয়তো পাওয়া যাবে। উচ্চরক্তচাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মর্নিং ওয়াকের কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন যদি নিয়মিত 30 মিনিট হাঁটা অভ্যাস করা হয়, তবে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতের মুঠোয়।
কোলেস্টেরল(Cholesterol):
নিয়মিত 30 মিনিটের মর্নিং ওয়াক কমাতে পারে ট্রাইগ্লিসারইড - এর সমস্যা। রক্তে বেড়ে যায় HDL এর মাত্রা। ফলে আপনার কোলেস্টেরল নিয়ে বাড়তি কোন চাপ থাকে না।
ওজন( Weight):
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে, শুধু আমাদের দেশে বললে ভুল হবে গোটা বিশ্বে একটা চরম সমস্যা হল শরীর মোটা হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে যাওয়া। যারফলে বেড়ে যাচ্ছে জীবনহানির মতো সমস্যা।
দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার 25% ক্ষেত্রে দায়ী হল আমাদের অলস জীবনযাপন। আর বাকি 75% ক্ষেত্রে দায়ী মাত্রারিক্ত খাদ্যগ্রহণ। যাদের খুব ওজন বেড়ে গেছে তারা রোজ নিয়মিত 40 - 45 মিনিট মর্নিং ওয়াক করুন। সেই সাথে খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দিন। মানে বলতে চাইছি একটু মেপে বুঝে খান।
আরও পড়ুন:
*কোলেস্টেরল বাড়লে কি করবেন?
*পা ফাটা থেকে মুক্তির উপায়
হাড়( Bone):
দেহের হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করার অন্যতম উপায় হল এক্সারসাইজ। আমাদের শরীরের যে হাড়ের কাঠামো তাকে ধরে রাখে পেশীগুলি। নিয়মিত হাঁটলে সমস্ত শরীরের পেশির সচলতা বজায় থাকে। পেশির শক্তি বাড়ে। প্রতিদিন হাঁটলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়। হাড় মজবুত হয়।
স্ট্রোক ও কিডনির অসুখ( Stroke & Kidney disease):
নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করলে কোলেস্টেরল কমে, সেই সাথে কমে যায় ট্রাইগ্লিসারইড এর মাত্রা। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারইড এর মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে স্ট্রোকের আশঙ্কা আর থাকে না। এবং সেই সাথে কিডনির সমস্যাও দূর হয়।
মানসিক অবসাদ( Depression):
শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় মর্নিং ওয়াক। আজকাল কাজের চাপের কারণে 10 জনের মধ্যে 1 জন ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছেন।
প্রতিদিন সকালে 30 মিনিট হাঁটলে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ বাড়ে এবং অবসাদ কাটতে শুরু করে। কাজকর্মে অনেক বেশি উৎসাহ পাওয়া যায়। সন্ধ্যাবেলাতে এনার্জির কোন ঘাটতি হয় না। মানসিক চাপ কমায়। হাঁটলে এনডোফিন হরমোনের মাত্রা বাড়ে। এই হরমোন আমাদের মুড ভালো রাখে।
ক্যান্সার( Cancer):
বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে - নিয়মিত হাঁটলে ওভারিয়ান ক্যান্সার(Ovarian cancer), ব্রেস্ট ক্যান্সার(Breast cancer), সারভাইভাল ক্যান্সার(Survaival cancer) ইত্যাদি কিছু অসুখ কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যায়।
সন্তানসম্ভবা মহিলা( Pregnant woman):
সন্তানসম্ভবা মহিলারা নিয়মিত হাঁটলে, তাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ক্ষরণ স্বাভাবিক হয়। নিয়মিত হাঁটলে মিসক্যারাজ হওয়ার আশঙ্কা কমায়। আরও একটা বড় ব্যাপার হল, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করাও সম্ভব হয়।
ফুসফুস(Lungs):
প্রতিদিন হাঁটাহাটি করলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। কারণ হাঁটাহাটি করলে ফুসফুস সহ সমগ্র দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় থাকে। ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা(Immunity power):
প্রতিদিন হাঁটলে ঋতু পরিবর্তনের অসুখগুলির আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
চুল ও ত্বক( Hair & Skin):
নিয়মিত হাঁটাহাটি করলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ফলে আমাদের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। চুল পড়াও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। দ্রুত বয়স বেড়ে যাওয়া ও সেই সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর হয়।
ঘুম(Sleep):
যারা খুব সকালে ওঠেন, তাদের রাতে ঘুম ভালো হয়। আসলে খুব সকালবেলার আলো আমাদের শরীরে বেশ কিছু হরমোনের ক্ষরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে আমাদের ঘুম খুব ভালো হয়। তাই খুব সকালে উঠে নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করা একান্ত জরুরী।