কমলালেবুর উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ Health Benefits of Orange

আমলকির পরে ভিটামিন C এর উৎস হিসেবে যাকে ধরা হয় তা হল কমলালেবু(Orange)। কাঁচা আমলকি যেহেতু সারা বছর পাওয়া যায় না, তাই সেটা শুকনো বা পাউডার রূপে রাখা হয়। কিন্তু কমলালেবু সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই ভিটামিন C কে নিয়ে আমাদের আর দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না।



একটি মাঝারি সাইজের আমলকিতে যে পরিমাণ ভিটামিন C থাকে তা দুইটি কমলালেবুর সমান। কিন্তু কাঁচা আমলকি তো আর সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই আমরা সবাই কমলালেবুকেই পছন্দ করি। আর একটা ব্যাপার হল আমলকি স্বাদে একটু টক। তাই আমরা অনেকেই এটিকে এড়িয়ে চলি। কিন্তু কমলালেবু স্বাদে দারুন মিষ্টি।


কমলালেবুর উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ (Benefits of Orange):


1.  100 গ্রাম কমলাতে আছে ভিটামিন বি 0.8 মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি 49 মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম 33 মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম 300 মিলিগ্রাম, ফসফরাস 23 মিলিগ্রাম।

2.  আমাদের প্রতিদিন যতটুকু ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন তার প্রায় সবটাই একটি কমলালেবু  থেকে পাওয়া যেতে পারে।

3.  কমলায় আছে শক্তি সরবরাহকারী চর্বিমুক্ত 80 ক্যালরি, যা শক্তির ধাপগুলোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

4. কমলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক, স্বাস্থ্যকর, রক্ত তৈরিকারক এবং ক্ষত নিরাময়কারী হিসেবে খুবই উপযোগী।

5. কমলা ভিটামিন বি এর খুব ভালো উৎস  যা জন্মগত ত্রুটি এবং হৃদরোগের জন্য ভালো কাজ করে।

6. প্রতিদিনের  প্রয়োজনীয় পটাসিয়ামের 10 ভাগ পূরণ করা সম্ভব কমলা দিয়ে, যা শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এবং ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য  প্রয়োজন।

7. কমলাতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল ড্যামেজ করে। ফলে ত্বকে সজীবতা বজায় থাকে।

8. কমলায় উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।

9. কমলাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

10. কমলাতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম থাকায় ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

11. কমলালেবু  পটাসিয়াম ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।

12. কমলাতে উপস্থিত লিমিনয়েড মুখ, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলীকে কোমল রাখে এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

13.  কমলালেবু  ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ওজন কমাতেও সহায়তা করে।




কমলালেবুর খোসার উপকারিতা (Benefits of Orange peel):


কমলালেবু কম-বেশি আমরা সবাই খেতে পছন্দ করি। স্বাস্থ্যের উপকারিতা দিক থেকেও এটির যেমন গুণ রয়েছে, তেমনি এর খোসার ও কিছু উপকারী দিক আছে। আমরা খাওয়ার পর কমলালেবুর খোসাটি সমসময়ই ফেলে দি। কিন্তু এটা কোনো ফেলনা জিনিস নয়। খোসা হলেও এর রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার।

হাঁপানি ও কাশির সমস্যায় :

কমলার খোসার গুঁড়ো কাশির সমস্যা দূর করে। এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও অ্যাজমা উপশমে এটি কাজে লাগে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কমলার খোসায় তৈরি চা নিয়মিত পান করুন।

কফ ও পিত্তের সমস্যায়:

কফ ও পিত্ত সমস্যার সমাধানে কমলার খোসা উপকারী। কমলার খোসা পাতলা করে চেঁছে নিয়ে কুচি করে নিন। খোসার কুচিগুলো চা তৈরির সময়েই ঢেলে দিন। এর সাথে অল্প পরিমাণে আদা দিতে পারেন। এবার জল ফুটলে আদা ও কমলার গন্ধ ছড়ালেই চায়ের মতো পান করুন। চাইলে মধুও মেশাতে পারেন।

অ্যাসিডিটি বা অম্বল দূর করতে:

কমলার খোসার তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রয়েছে যা পেটের অ্যাসিডিটি দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ডি-লিমোনেন নামের একটি উপাদান আছে যা অন্ত্র ও লিভার ফাংশনকে স্বাভাবিক রাখে। আর এর তেল জলে  দু’ফোঁটা মিশিয়ে পান করলে অ্যাসিডির সমস্যা একেবারেই চলে যাবে।

কোলেস্টেরল ও ওজন কমাতে:

উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের সমস্যা ও ওজন কমানোর জন্য কমলার খোসা অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড দ্রবীভূত থাকে যেটি সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের কালো দাগ দূর করতে:

1 টেবিল চামচ টক দই, 1/2 চামচ মধু, 1  চা চামচ কমলার খোসা বাটা এক সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগান। 10  মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে প্যাকটিতে এক চা চামচ অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন।

মুখের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে:

2 চা চামচ দই এবং 2 চা চামচ কমলার খোসার গুঁড়া একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। যেসব স্থানে ব্ল্যাকহেডস হয়েছে সেখানে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। 20 মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে 3 থেকে 4 দিনের মধ্যে সমস্যা কমে যাবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি:

কমলার খোসা বাটা 1 টেবিল চামচ, 1/2 টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া, 1/2 টেবিল চামচ মধু এবং 1/2 চা চামচ জয়ফলের গুঁড়া নিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান। 20 মিনিট রেখে হালকা ম্যাসাজ করে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পরে ময়শ্চারাইজার লাগান।

জানালা এবং ফ্লোর পরিষ্কার করতে:

একটি গ্লাসের জারে কমলার খোসা রেখে তাতে ভিনিগার ঢালুন। এটিকে ঢেকে কয়েক সপ্তাহ ফ্রিজে রেখে দিন। মাঝে মাঝে এটি নেড়ে দিন। পর বের করে ছেঁকে নিয়ে একচি স্প্রে বোতলে ঢালুন। জানালা ও ফ্লোর পরিষ্কারক হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।