চুল গজানোর উপায় How to regrow your hair in Bengali?

নতুন চুল কিভাবে গজাবে? কিভাবে বাড়িতে হেয়ার প্যাক তৈরি করবেন?



নিজের কাজের জন্য আমাকে বেশিরভাগ সময় বাইরে বাইরে কাটাতে হয়। কাজের সূত্র ধরে বাসে, ট্রেনে, ট্রামে বা অটোতে যাতায়াত করতে হয়। আমার পাশে বা কিছু দূরে অনেক যাত্রীর বিশেষ করে মহিলা যাত্রীর কথা বার্তা আমার কানে আসে। বেশির ভাগ মহিলাদের একটাই সমস্যার কথা শুনতে পাই 'চুল পড়ে যাচ্ছে। কি করি?'। অনেকে বলে, 'কতো হেয়ার প্রোডাক্ট use করলাম, কতো হেয়ার অয়েল use করলাম, কিছুই কাজে আসছে না। চুল উঠে উঠে টাক পরে যাচ্ছে।'

আসলে চুল এমন একটাই অমূল্য সম্পদ যা হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হতে থাকলে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। সৌন্দর্য বজায় রাখতে গেলে চুল ছাড়া হয় নাকি? সে নারী হোক বা পুরুষ! আজকাল বেশিরভাগ পুরুষের মাথায় চুল নেই, মানে টাক মাথা। যেন ফুটবল খেলার ময়দান! পুরুষের টাক আজকাল গা সোয়া হয়ে গেছে। কেউ আর এইসব ব্যাপারে মাথা ঘামায় না। কিন্তু একজন নারীর টাক পরে গেলে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেন আশ্চর্য ব্যাপার!

আমি অনেক ম্যাগাজিন, অনেক নেট ঘেঁটে অনেক কিছু শিখে মানে অনেক উপায় খুঁজে সেগুলি নিজের পরিবারের সদস্যদের ওপর প্রয়োগ করে তবেই আমার এই অভিজ্ঞতা আপনারদের সাথে শেয়ার করছি। আমার এই টিপস গুলি যদি ঠিকঠাক follow করতে পারেন তো আপনার চুল পড়ে যাওয়া কমে যাবে এবং  আবার নতুন চুল গজাবে।

কিছু বেসিক টিপস মেনে চলুন: Follow this basic Tips:

* প্রতিদিন পরিমাণমত জল পান করুন। অন্তত পক্ষে 2 থেকে 3 লিটার জল পান করুন।

* প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করবেন না। এতে চুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সপ্তাহে 3 দিন shampoo করুন।

* যেদিন শ্যাম্পু করবেন তার আগের দিন চুলে ভালো করে নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন অন্তত 1 ঘণ্টা। এই কাজটা রাতে করতে পারলে ভালো হয়।

* চুল ভিজে অবস্থায় আঁচড়াবেন না, এতে চুলের প্রচুর ক্ষতি হয় এবং চুল উঠে যায়। চুল ভালো করে শুকিয়ে তবেই চিরুনি দেবেন। আর চুল কখনই রোদে শুকাবেন না।

* দিনের বেশিরভাগ সময় চুল খুলে রাখবেন না, চুল বেঁধে রাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো করে চুল বেঁধে তবেই ঘুমাতে যান।

* চুল পেকে না গেলে চুলে হেয়ার ডাই না ব্যবহার করাই ভালো। কাঁচা চুলে হেয়ার ডাই ব্যবহার করলে সেগুলি ধীরে ধীরে পেকে যেতে থাকে।

* সপ্তাহে একদিন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন।

* রাত জাগা বন্ধ করুন। ঠিক মত ঘুমান। অন্তত পক্ষে 8 থেকে 10 ঘণ্টা ঘুমান।

* ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ খাবেন না।

কিভাবে বাড়িতে বসেই খুব সহজে হেয়ার প্যাক তৈরি করবেন তা বিস্তারিত বলা হচ্ছে।

কিভাবে বাড়িতে হেয়ার প্যাক তৈরি করবেন? How to make Hair pack at your home?

কি কি উপকরণ লাগবে:

1. ভালো নারকেল তেল।

2. টক দই।

3. মধু

4. ডিমের সাদা অংশ।



কিভাবে তৈরি করবেন:

* প্রথমে একটি বাটিতে চুলের পরিমাণ অনুযায়ী নারকেল তেল নিন।

* তারপর ওই নারকেল তেলের সাথে পরিমাণমত টক দই মিশিয়ে নিন।

* এর সাথে 2 থেকে 3 চামচ মধু মিশিয়ে দিন।

* একটি ডিম ভেঙ্গে তার সাদা অংশটি ওই মিশ্রণে যোগ করুন।

* এবার সমস্ত মিশ্রণটি একটি চামচের সাহায্যে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

এবার আপনার হেয়ার প্যাক তৈরি। এই হেয়ার প্যাকটি সমস্ত চুলে ভালো করে লাগিয়ে 5 মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। এরপর 1 ঘন্টা পর ঠান্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং পরে শ্যাম্পু করুন।

এইভাবে সপ্তাহে একদিন এই হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন এবং 2 মাস চালিয়ে যান। দেখবেন আপনার চুল পড়া অনেক কমে গেছে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করেছে। চুল আগের থেকে অনেক স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠবে।

অকালে চুল পাকা কিভাবে রোধ করবেন? How to stop premature hair greying in Bengali?

অকালে বা অসময়ে চুল পেকে যাওয়া বা সাদা হয়ে যাওয়া এখনকার young generation এর কাছে একটা ভীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যিই তাই, অকালে চুল পেকে যাওয়া মানে বার্ধক্য যেন কড়া নাড়ছে। আমরা কেউই অকালে বুড়ো বুড়ি সাজতে চাই না। তাই পাকা চুল ঢেকে বয়সটাকে কমিয়ে রাখার চেষ্টা করি। মানে সোজা কথায় বলতে গেলে পাকা চুল হেয়ার ডাই দিয়ে কালো করে ফেলি। এটা একেবারেই কাম্য নয়। আমাদের চুল বা ত্বক বেশিদিন এই অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। ফলে ত্বকের বা গোটা শরীরের নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।


অকালে চুল পেকে যাওয়ার কারণ (Causes of hair greying):


চুল পেকে যাওয়ার পিছনে হাজারও কারণ থাকে। চুল পাকার একটা মূল কারণ হল জেনেটিক ফ্যাক্টর(Genetic factor)। অর্থাৎ আপনার পূর্বপুরুষদের অকালে চুল পাকার সমস্যা ছিল সেই কারণে আপনার চুল পেকে যাচ্ছে। তবে বর্তমান সময়ে চুল পাকার একটা বড় কারণ হল মানসিক চাপ(Stress)। এখনকার দিনে চাপ মুক্ত মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যদি না পাগল হয়।

এছাড়া আমাদের দেহের হরমোনের বৈসাম্য(Hormonal imbalance), পুষ্টির অভাব(Poor nutrition), ধূমপান(Smoking), ড্রিঙ্ক(Drink) করা, দূষণ, কেমিক্যাল মিশ্রিত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার ইত্যাদি।

দীর্ঘদিন ক্রনিক সর্দি-কাশি তে ভুগলে, সাইনুসাইটিস, থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অকালে চুল পেকে যায়।

আমাদের প্রতিটি চুলের গোঁড়ায় একধরনের গ্রন্থি থাকে যাকে হেয়ার ফলিকল(Hair follicle) বলে। এই গ্রন্থিতে প্রচুর রঞ্জক কোষ(Pigment cell) থাকে যা থেকে মেলানিন(Melanin) ক্ষরিত হয়। এই মেলানিনের জন্যই আমাদের চুল কালো, লাল বা বাদামি রঙের হয়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রঞ্জক কোষগুলি মারা যেতে থাকে। ফলে মেলানিন ক্ষরণ কম হতে থাকে এবং আমাদের চুল ধীরে ধীরে সাদা হতে থাকে।

কিছু ঘরোয়া টিপস (Some useful home remedies to prevent premature hair greying):



মেহেদী পাতা (Henna):

মেহেদী পাতা আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি চুলের গোঁড়া শক্ত করার পাশাপাশি চুলের রঙ কালো রাখতে সাহায্য করে।

একমুঠো মেহেদী পাতা নিয়ে ভালো করে বেঁটে পেস্ট করে নিন। তারপর এর সাথে কিছুটা আমলকি পাউডার এবং কফি পাউডার মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিন। এরপর এই পেস্ট সমস্ত চুলে ভালো করে লাগান। 1 ঘন্টা পর ভালো কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে 1 দিন করুন প্রায় 1 মাস পর্যন্ত।

এছাড়া আরেকটি পদ্ধতি আছে। একমুঠো মেহেদী পাতা এবং পরিমাণমত নারকেল তেল ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা হলে তেল ছেঁকে নিন। এই তেল 1 মাস ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন।

আমলকি (Amla):

আমলকি আমাদের ত্বকের পক্ষে যেমন উপকারী তেমনি চুলের অকাল পক্কতা(Premature hair greying), চুল পড়া(Hair loss), চুলের ডগা ফেটে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যার শেষ কথা।

আমলকিতে আছে ভিটামিন C এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের বয়স বাড়তে দেয় না। আমাদের ত্বক ও চুল বহুদিন পর্যন্ত তরুণ(Youthful) রাখে।
আমলকি কাঁচা বা শুকনো দুইভাবেই ব্যবহার করা হয়।

একটি পাত্রে 50 ml নারকেল তেল এবং টুকরো করা কাঁচা আমলকি বা শুকনো আমলকির টুকরো বা পাউডার নিয়ে তেল টা হালকা ফুটিয়ে নিন। তেল ঠান্ডা হয়ে এলে ছাঁকনি দিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিন। এই তেল সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করুন এবং সমস্ত চুলে ভালো করে লাগিয়ে সারারাত রেখে পরেরদিন সকালে ভালো কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই তেল কোন কাঁচের বোতলে রেখে এক মাস ব্যবহার করুন।

এছাড়া আমলকি রস এবং অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগান। একই উপকার পাবেন।

শিকাকাই (Shikakai):

বহু প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে শিকাকাই চুলের যত্নের জন্য ব্যবহার হয়। শিকাকাই প্রাকৃতিক শ্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি চুল পাকা রোধ করে, নতুন চুল গজাতে এবং চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে। শিকাকাইতে আছে ভিটামিন C যা চুলের জন্য খুব উপকারী।

একটি পাত্রে পরিমাণমত শিকাকাই পাউডার এবং টক দই নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। এরপর এই পেস্ট সমস্ত চুলে ভালো করে লাগিয়ে রাখতে হবে। 20 মিনিট পর ভালো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে দুইদিন করতে হবে।

পেঁয়াজের রস (Onion juice):

পেঁয়াজের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে। এই রস চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, নতুন চুল গজাতে এবং চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

চুলের পরিমাণ অনুযায়ী পেঁয়াজের রস নিয়ে চুলে এবং চুলের গোঁড়ায় ভালো করে লাগাতে হবে। তারপর 30 মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এইভাবে একদিন অন্তর পেঁয়াজের রস লাগিয়ে যেতে হবে পুরো একমাস পর্যন্ত।

ঝিঙে (Ribbed gourd):

আপনারা হয়তো জানেন না ঝিঙে শুধুমাত্র সবজি হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না, এর অন্য গুণও আছে। ঝিঙের রস চুলের রঞ্জক কোষগুলিকে পুষ্টি জুগিয়ে মেলানিন ক্ষরণে উজ্জীবিত করে। ফলে আমাদের চুল অকালে পেকে যায় না।

ঝিঙে গোল গোল পিস করে কেটে নিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর এককাপ নারকেল তেলে শুকনো ঝিঙে গুলি 3 দিন পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই তেল ছেঁকে নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিতে হবে।
এই তেল প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে সারারাত রেখে পরেরদিন ধুয়ে ফেলতে হবে।

ভিটামিন B12 (Vitamin B12):

বহুদিন ধরে দেহে ভিটামিন B12 এর অভাব হলে আমাদের চুল ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যেতে থাকে।
আপনারা লোকাল কোন মেডিকেল দোকানে গিয়ে ভিটামিন B12 সমৃদ্ধ ক্যাপসুল বা সিরাপ কিনে একমাস পর্যন্ত খেতে পারেন। অথবা বাড়িতে ভিটামিন B12 সমৃদ্ধ খাবার যেমন - দুধ, ভাত, সবরকম ফল, শাকসবজি ইত্যাদি খেতে পারেন।

খুসকি হলে কি করবেন? Dandruff - It's Causes & Treatment in Bengali

খুসকি(Dandruff) হল আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প(Scalp) এর একটি বিরক্তিকর রোগ। সাধারণত ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই বেশি খুসকি সমস্যাই ভুগে থাকেন। খুসকি আসলে আমাদের স্কাল্পের মরা চামড়া। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে(Personal life) খুশকির একটি দারুন প্রভাব আছে। প্রভাবটি হল সবসময় আমাদের পিছনে লাগা বা বিরক্ত করা।





বুঝলেন না কি বললাম? আসলে সত্যি কথা হল যেনারা খুশকি সমস্যাই ভুগছেন তেনারা সবসময় মাথা চুলকান। খুসকি আমাদের ত্বকে চুলকানির সৃষ্টি করে। তাই আমরা আঙুল বা নখ দিয়ে মাথা চুলকায়।
এই খুশকির জন্যই আমাদের মাথার চুল পড়ে যেতে থাকে। দীর্ঘদিন মাথায় খুসকি থাকলে চুল পেকে যেতে থাকে।


খুসকি কি কারণে হয়? (Causes of dandruff?):


মাথায় খুসকি নানা কারণে হতে পারে। আমাদের মাথার চামড়া প্রতিদিনই তার রূপ পরিবর্তন করে। অর্থাৎ পুরোনো চামড়া মারা গিয়ে আবার নতুন চামড়ার সৃষ্টি হয়। এই প্রসেস(Process) চলাকালীন যদি মালাসেজিয়া(Malasezia) নামক একপ্রকার ছত্রাকের(Fungus) আক্রমণ ঘটে তবে খুসকি সমস্যার সৃষ্টি হয়।

আমরা যদি দীর্ঘদিন ধরে কোন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বাসকরি তবে খুসকির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কারণ স্যাঁতসেঁতে জায়গা খুসকিরা বেশি পছন্দ করে।

আবার আপনি যদি অতিরিক্ত ধুলা বালি, ময়লা, ধুঁয়া ইত্যাদি পরিবেশে বাস করেন তবে আপনার খুসকি হবে। আমাদের মাথায় প্রতিদিন ধুলা বালি ইত্যাদি বসে এবং মাথায় মরা চামড়া গুলিও জমা হয়। তাই নিয়মিত মাথা পরিস্কার না করলে খুশকিরা সেখানে বাসা বাঁধে।

এছাড়া দীর্ঘদিন পুষ্টির অভাব, ভিটামিন B ও আয়রনের অভাব ইত্যাদি কারণে মাথায় খুসকি হয়।

যাদের ঠান্ডা লাগার ধাত আছে বা এলার্জি সমস্যাই ভোগেন এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই খুশকির সমস্যাই বেশি ভোগেন।

খুসকি কিভাবে দূর করবেন? (How to prevent dandruff?):


নারকেল তেল (Coconut oil):

নারকেল তেলে antifungal উপাদান থাকার জন্য ইহা খুসকি প্রতিরোধ করে। নারকেল তেল স্কাল্পের শুষ্কভাব দূর করে ফলে চুলকানি সমস্যা দূর হয়।

একটি বাটিতে কিছু পরিমাণ নারকেল তেল নিয়ে তার সাথে একটু পাতিলেবুর রস মিশিয়ে সেই মিশ্রণ চুলে লাগান। 20 মিনিট পর ভালো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এইভাবে সপ্তাহে তিনদিন করুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে।

পাতিলেবু (Lemon):

পাতিলেবুতে আছে সাইট্রিক এসিড যা স্কাল্পের fungus গুলিকে মেরে ফেলে এবং খুসকি হতে দেয় না। এছাড়া ইহা ত্বকের চুলকানিও দূর করে।

একটি বাটিতে পাতিলেবুর রস নিয়ে তার সাথে একটু টক দই মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর এই পেস্টটি সমস্ত মাথায় ভালো করে লাগিয়ে রাখুন। 30 মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে দুইদিন করুন।

এছাড়া আপনি পাতিলেবুর রস জলে মিশিয়ে সেই জল তুলো দিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। একই ফল পাবেন।

আসপিরিন (Aspirin):

আসপিরিন মূলত দেহে ব্যথা বেদনা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। তাহলে আপনারা হয়তো ভাবছেন এর সাথে খুসকির কি সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে বন্ধুরা।

আসপিরিনে আছে সালিসাইলিক এসিড(Salicylic acid) যা স্কাল্পের fungus গুলিকে ধ্বংস করে এবং খুসকি প্রতিরোধ করে।

একটি আসপিরিন ট্যাবলেট ভালো করে গুঁড়ো করে সেটা আপনার চুলের পরিমাণ অনুযায়ী শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে নিন। তারপর সেই শ্যাম্পু মাথায় অন্তত 5 মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এইভাবে করুন।

এলোভেরা (Aloe vera):

খুশকির জন্য স্ক্যাল্পে চুলকানি হলে এলোভেরা জেল তার একমাত্র সমাধান। এলোভেরায় আছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান এবং cooling effect যা চুলকানি উপশম করে ত্বক ঠান্ডা রাখে।

একটি এলোভেরা পাতা নিয়ে ছুরি দিয়ে ভিতরের জেল অংশটি চেঁছে নিতে হবে। তারপর সেটি সরাসরি আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন এইভাবে করলে ত্বকের চুলকানি দূর হবে।
এছাড়া এলোভেরা জেল natural conditioner হিসাবে কাজ করে।

নিম পাতা (Neem leaves):

নিম পাতায় আছে antifungal এবং antibacterial উপাদান যা খুসকি প্রতিরোধ করে এবং চুলকানি উপশম করে।

একমুঠো নিম পাতা জলে ফেলে সেই জল ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই জল সারারাত রেখে পরেরদিন সকালে নিম পাতাগুলি ছেঁকে নিতে হবে। এরপর সেইজল দিয়ে সমস্ত চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

এছাড়া টাটকা নিম পাতা বেঁটে পেস্ট করে নিয়ে চুলে লাগাতে হবে। তারপর 30 মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুইদিন করলেই হবে।

অলিভ অয়েল (Olive oil):

অলিভ অয়েল একটি প্রাকৃতিক moisturizer যা আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং চুলকানি উপশম করে।

একটি বাটিতে অলিভ অয়েল নিয়ে সামান্য গরম করে নিন। তারপর সেই তেল দিয়ে চুল এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।

ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে সমস্ত চুল কোন তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন। এইভাবে 45 মিনিট থাকার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এইভাবে আপনি সারারাতও রাখতে পারেন এবং পরেরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন। অনেক ভালো উপকার পাবেন।

টি ট্রি অয়েল (Tea tree oil):

Tea tree oil এ antifungal এবং antibacterial ক্ষমতা বর্তমান। এর জন্য ইহা খুসকি প্রতিরোধে দারুন কাজ করে।

আপনার শ্যাম্পুতে 2 - 3 ফোঁটা Tea tree oil মিশিয়ে চুলে শ্যাম্পু করে নিন। তারপর 2 মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন করুন। উপকার পাবেন।

চুল পড়া কিভাবে রোধ করবেন? How to stop Hair Fall in Bengali?

মাথা ভর্তি ঘন, কালো সুন্দর চুল কে না চাই? আসলে মাথায় ঘন কালো চুল থাকলে যেন নিজের আত্মবিশ্বাস (Self confidence) ফিরে পাওয়া যায়। মাথা ভর্তি চুল যেন যৌবনের আর এক নাম। কিন্তু এই চুল যদি পড়ে যেতে থাকে? বর্তমান সময়ে চুল পড়ে(Hair fall) যাওয়া যেন একটা common ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।


চুল পড়ার কারণ (Causes of Hair falling):

চুল পড়ে যাওয়ার পিছনে আছে হাজারও কারণ। তার মধ্যে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরা হল।
যেমন -  আমরা যে পরিবেশে বসবাস করি সেখানকার আবহাওয়া হয়তো আমাদের চুল সুট (Suit) করতে পারছে না, আমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে সেই কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে, আমরা প্রতিদিনের জীবনে অহেতুক নানান চাপ (Stress) নিয়ে ফেলি, ফলস্বরূপ আমাদের চুল পড়ে যেতে থাকে।

অতিরিক্ত ধূমপান করা, পুষ্টির অভাব, hormonal imbalance, বংশগত কারণ, চুলে কেমিক্যাল মিশ্রিত তেল, হেয়ার ডাই, shampoo প্রভৃতি ব্যাবহার ইত্যাদি কারণে চুল পড়ে যেতে পারে।
এছাড়া কিছু রোগ যেমন- থাইরয়েড সমস্যা, আয়রণ অভাব, রক্তাল্পতা (Anaemia), দীর্ঘদিন অসুস্থ্যতার কারণেও আমাদের চুল পড়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হল এই চুল পড়া কীভাবে রোধ করবেন?  নীচেই কিছু কার্যকারী টিপস দেওয়া হল।


চুল পড়া কিভাবে রোধ করবেন? (How to prevent hair fall?):


1. ডায়েট এবং ব্যায়াম:

আমাদের প্রতিদিন সুষম খাদ্য খেতে হবে। সুষম খাদ্য বলতে মূলত আয়রণ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন- দুধ, মাছ, ডিমের সাদা অংশ, শাকসবজি ইত্যাদি।
সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কিছু হালকা যোগাসন করা, মাথার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা ইত্যাদি করতে হবে।

2. প্রচুর জলপান করা:

আমাদের গ্রীষ্মকালেই বেশি চুল পড়তে দেখা যায়। যার একটা কারণ হল আমাদের ঘামের সাথে প্রচুর জল, লবণ বেরিয়ে যায়। প্রতিদিন 7 - 8 লিটার জলপান করা আবশ্যিক। তাতে আমাদের দেহের জলসাম্য বজায় থাকে।

3. এলোভেরা (Aloe vera) প্রয়োগ:

এলোভেরা চুল পড়া এবং চুল গজাতে খুবই উপকারী। এছাড়া এলোভেরা মাথার স্কাল্পের চুলকানি ও খুশকি দূর করতে দারুন কাজ করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- প্রথমে একটি এলোভেরা পাতা কেটে ছুড়ি দিয়ে ভিতরের জেল বের করে নিতে হবে।
- এরপর সেই জেল হাতে নিয়ে সারা চুল এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।
- এরপর প্রায় 45 মিনিট রেখে কোন ভালো shampoo দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
- তাড়াতাড়ি ফল পেতে এই পদ্ধতি সপ্তাহে 3 - 4 দিন করতে হবে।

4. আমলকি (Amla):

চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পেকে যাওয়া রোধ করতে আমলকির কোন জুড়ি নেই। আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে Vitamin C এবং Antioxidant যার অভাব হলে আমাদের চুল পড়ে যেতে থাকে।
আমলকি কাঁচাও খাওয়া যায় বা আমলকি পাউডার চুলেও লাগানো যায়।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- আমলকি পাউডার ও পাতিলেবুর রস একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে।
- লাগানোর পর সেটা সারারাত রেখে দিয়ে সকালে shampoo করতে হবে।
- এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুইদিন করতে হবে।

5. পেঁয়াজের রস (Onion juice) প্রয়োগ:

পেঁয়াজে বিশেষ করে লাল পেঁয়াজে উচ্চমানের সালফার থাকার জন্য তা আমাদের মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন করে চুল গজায়। এছাড়া পেঁয়াজে antibacterial উপাদান থাকায় তা চুলের খুশকি প্রতিরোধ করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- প্রথমে পেঁয়াজ থেকে রস বের করে তা মাথার চুল এবং স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।
- এরপর প্রায় 30 মিনিট পর ধুয়ে ফেলে shampoo করতে হবে।
- এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুইদিন করতে হবে।

6. চুলে তেল দেওয়া (Oiling):

আজকাল young generation দের মধ্যে চুলে তেল না দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে আমাদের চুল ঠিক মত পুষ্টি পায় না এবং চুল পড়ে যেতে থাকে।

মাথায় নারকেল বা আমলা তেল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর সারারাত রেখে সকালে shampoo করে ফেলতে হবে। এতে চুলও তেলমুক্ত হয় এবং চুল পুষ্টিও পায়।

7. সবুজ চা (Green tea) ব্যবহার:

Green tea তে আছে antioxidant যা চুলে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিয়ে চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

- 3 - 4 টি green tea ব্যাগ নিয়ে তা গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
- সেই জল ঠান্ডা হলে মাথায় হালকা ম্যাসাজ করতে হবে।
- তারপর আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।


স্বাস্থ্যবান চুলের জন্য ডায়েট


1. গাজর (Carrots):

Vitamin A এর একটি মূল উৎস হল গাজর।
নিয়মিত গাজর খেলে আমাদের স্কাল্পের চুলকানি এবং শুষ্কভাব দূর হয়। গাজর চুলে vitamin A এর যোগান দেয়, ফলে চুল পড়া রোধ হয়। এছাড়া গাজরে আছে antioxidant যা আমাদের চুলের স্বাভাবিক ঘনত্ব বজায় রাখে, চুল পাকা এবং চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করে।

2. আমলকি (Amla):

আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে vitamin C এবং antioxidant যা চুল পড়া, অকালে চুল পাকা, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দূর করে।
প্রতিদিন দুটি মাঝারি সাইজের আমলকি খেলে আমাদের দেহের প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয় এবং আমাদের চুলও স্বাস্থ্যবান থাকে।

3. পালংশাক (Spinach):

আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার একটা মূল কারণ হল দেহে আয়রনের ঘাটতি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ পাওয়া যায়। শুধু আয়রণ নয় পালংশাকে আছে ভিটামিন A, C এবং ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম যা চুল পড়া, চুলের বৃদ্ধি প্রভূতিতে দারুন কার্যকারী।