কমলালেবুর উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ Health Benefits of Orange

আমলকির পরে ভিটামিন C এর উৎস হিসেবে যাকে ধরা হয় তা হল কমলালেবু(Orange)। কাঁচা আমলকি যেহেতু সারা বছর পাওয়া যায় না, তাই সেটা শুকনো বা পাউডার রূপে রাখা হয়। কিন্তু কমলালেবু সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই ভিটামিন C কে নিয়ে আমাদের আর দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না।



একটি মাঝারি সাইজের আমলকিতে যে পরিমাণ ভিটামিন C থাকে তা দুইটি কমলালেবুর সমান। কিন্তু কাঁচা আমলকি তো আর সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই আমরা সবাই কমলালেবুকেই পছন্দ করি। আর একটা ব্যাপার হল আমলকি স্বাদে একটু টক। তাই আমরা অনেকেই এটিকে এড়িয়ে চলি। কিন্তু কমলালেবু স্বাদে দারুন মিষ্টি।


কমলালেবুর উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ (Benefits of Orange):


1.  100 গ্রাম কমলাতে আছে ভিটামিন বি 0.8 মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি 49 মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম 33 মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম 300 মিলিগ্রাম, ফসফরাস 23 মিলিগ্রাম।

2.  আমাদের প্রতিদিন যতটুকু ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন তার প্রায় সবটাই একটি কমলালেবু  থেকে পাওয়া যেতে পারে।

3.  কমলায় আছে শক্তি সরবরাহকারী চর্বিমুক্ত 80 ক্যালরি, যা শক্তির ধাপগুলোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

4. কমলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক, স্বাস্থ্যকর, রক্ত তৈরিকারক এবং ক্ষত নিরাময়কারী হিসেবে খুবই উপযোগী।

5. কমলা ভিটামিন বি এর খুব ভালো উৎস  যা জন্মগত ত্রুটি এবং হৃদরোগের জন্য ভালো কাজ করে।

6. প্রতিদিনের  প্রয়োজনীয় পটাসিয়ামের 10 ভাগ পূরণ করা সম্ভব কমলা দিয়ে, যা শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এবং ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য  প্রয়োজন।

7. কমলাতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল ড্যামেজ করে। ফলে ত্বকে সজীবতা বজায় থাকে।

8. কমলায় উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।

9. কমলাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

10. কমলাতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম থাকায় ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

11. কমলালেবু  পটাসিয়াম ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।

12. কমলাতে উপস্থিত লিমিনয়েড মুখ, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলীকে কোমল রাখে এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

13.  কমলালেবু  ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ওজন কমাতেও সহায়তা করে।




কমলালেবুর খোসার উপকারিতা (Benefits of Orange peel):


কমলালেবু কম-বেশি আমরা সবাই খেতে পছন্দ করি। স্বাস্থ্যের উপকারিতা দিক থেকেও এটির যেমন গুণ রয়েছে, তেমনি এর খোসার ও কিছু উপকারী দিক আছে। আমরা খাওয়ার পর কমলালেবুর খোসাটি সমসময়ই ফেলে দি। কিন্তু এটা কোনো ফেলনা জিনিস নয়। খোসা হলেও এর রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার।

হাঁপানি ও কাশির সমস্যায় :

কমলার খোসার গুঁড়ো কাশির সমস্যা দূর করে। এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও অ্যাজমা উপশমে এটি কাজে লাগে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কমলার খোসায় তৈরি চা নিয়মিত পান করুন।

কফ ও পিত্তের সমস্যায়:

কফ ও পিত্ত সমস্যার সমাধানে কমলার খোসা উপকারী। কমলার খোসা পাতলা করে চেঁছে নিয়ে কুচি করে নিন। খোসার কুচিগুলো চা তৈরির সময়েই ঢেলে দিন। এর সাথে অল্প পরিমাণে আদা দিতে পারেন। এবার জল ফুটলে আদা ও কমলার গন্ধ ছড়ালেই চায়ের মতো পান করুন। চাইলে মধুও মেশাতে পারেন।

অ্যাসিডিটি বা অম্বল দূর করতে:

কমলার খোসার তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রয়েছে যা পেটের অ্যাসিডিটি দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ডি-লিমোনেন নামের একটি উপাদান আছে যা অন্ত্র ও লিভার ফাংশনকে স্বাভাবিক রাখে। আর এর তেল জলে  দু’ফোঁটা মিশিয়ে পান করলে অ্যাসিডির সমস্যা একেবারেই চলে যাবে।

কোলেস্টেরল ও ওজন কমাতে:

উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের সমস্যা ও ওজন কমানোর জন্য কমলার খোসা অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড দ্রবীভূত থাকে যেটি সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের কালো দাগ দূর করতে:

1 টেবিল চামচ টক দই, 1/2 চামচ মধু, 1  চা চামচ কমলার খোসা বাটা এক সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগান। 10  মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে প্যাকটিতে এক চা চামচ অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন।

মুখের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে:

2 চা চামচ দই এবং 2 চা চামচ কমলার খোসার গুঁড়া একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। যেসব স্থানে ব্ল্যাকহেডস হয়েছে সেখানে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। 20 মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে 3 থেকে 4 দিনের মধ্যে সমস্যা কমে যাবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি:

কমলার খোসা বাটা 1 টেবিল চামচ, 1/2 টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া, 1/2 টেবিল চামচ মধু এবং 1/2 চা চামচ জয়ফলের গুঁড়া নিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান। 20 মিনিট রেখে হালকা ম্যাসাজ করে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পরে ময়শ্চারাইজার লাগান।

জানালা এবং ফ্লোর পরিষ্কার করতে:

একটি গ্লাসের জারে কমলার খোসা রেখে তাতে ভিনিগার ঢালুন। এটিকে ঢেকে কয়েক সপ্তাহ ফ্রিজে রেখে দিন। মাঝে মাঝে এটি নেড়ে দিন। পর বের করে ছেঁকে নিয়ে একচি স্প্রে বোতলে ঢালুন। জানালা ও ফ্লোর পরিষ্কারক হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা Health benefits of eating Guava in Bengali

সুস্বাদু ফলের মধ্যে পেয়ারা(Guava) হল অন্যতম একটি ফল। পেয়ারাকে সুস্বাদু বলা হলেও কাঁচা অবস্থায় ইহা একটু কসা হয়ে থাকে। তবে পাকলে এই কসাভাব দূর হয়ে যায়। তখন খেতে দারুন লাগে।



তবে পেয়ারা(Guava) পাকা খাওয়ার চেয়ে অনেকে কাঁচা খেতে বেশি পছন্দ করেন। কাঁচা বা ডাঁসা পেয়ারার সঙ্গে একটু নুন(Salt) বা লঙ্কা মিশিয়ে দিলে আর কোন কথাই হবে না। তবে কাঁচা খেতে গেলে মজবুত দাঁত থাকা দরকার। তাই বয়স্কদের একটু নরম পাকা পেয়ারা খাওয়াই উচিত।

পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারা পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে পেয়ারা মূলত দুই রকমের হয়ে থাকে - একটি দেশী এবং অন্যটিকে বিদেশি বা হাইব্রিড(Hybrid) বলা হয়ে থাকে। হাইব্রিড পেয়ারা ডাঁসা অবস্থায় খেতে হয় পেকে গেলে খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ে। তবে দেশী পেয়ারা কাঁচা এবং পাকা দুই রকম ভাবেই খাওয়া যায় এবং এর স্বাদ হাইব্রিডের থেকে শতগুনে ভালো।

আগে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে "প্রতিদিন একটি আপেল খান এবং ডাক্তার হইতে দূরে থাকুন"। তবে এই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। আমরা বলে থাকি "আপেল ধনী লোকের খাবার"। তাই আমরা এই কথাটা বেশি চালু করেছি যে "প্রতিদিন একটি পেয়ারা খান এবং রোগ বালাইএর হাত থেকে রেহাই পান"। কি দারুন না!

পেয়ারাকে নিউট্রিশনের একটা power house বলা যায়। কারণ ইহাতে বেশ ভালো ক্যালোরির শক্তি(Energy) বর্তমান। পেয়ারাতে বেশ ভালো পরিমাণ ফাইবার এবং প্রায় সবরকম ভিটামিনই পাওয়া যায়। যেমন - ভিটামিন A, C, B complex (B1, B2, B5, B6, B9, B12)।
এছাড়া ইহাতে বিভিন্ন মিনারেল যেমন - ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার ইত্যাদি পরিমাণ মত থাকে।


পেয়ারা কেন খাবেন? (Health benefits of eating Guava):


চোখের যত্নে (Healthy eyes):

যেকোন স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার আমাদের চোখের পক্ষে দারুন উপকারী। পেয়ারাও তেমনই একটি পুষ্টিকর ফল।
পেয়ারাতে আছে ভিটামিন C যা আমাদের দুই চোখের ওপর কোন চাপ(Stress) পড়তে দেয় না।

পেয়ারাতে আছে উচ্চমানের ভিটামিন A যা আমাদের চোখের ছানি(Cataract) এবং গ্লুকোমা প্রতিরোধ করে। পেয়ারা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি(Eye vision) বাড়ায়।

আমরা জানি ভিটামিন A এর অভাবে রাতকানা(Night blindness) হয়। পেয়ারাতে আছে উচ্চমানের ভিটামিন A যা আমাদের চোখের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
তাই আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন একটা মিডিয়াম সাইজের পেয়ারা খাওয়া উচিত।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ (Control blood pressure):

পেয়ারাতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকার জন্য ইহা রক্তনালীর অন্তপ্রাচীর পরিস্কার রাখে। যারফলে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া পেয়ারাতে যে পটাসিয়াম থাকে তা রক্তের সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়াবেটিস রোগে (Diabetes):

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পেয়ারা অন্যতম একটি পছন্দের ফল। কারণ পেয়ারাতে আছে dietary fiber যা রক্তের গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

পেয়ারা রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা সঠিক রাখে বলে আমরা ডায়াবেটিসের হাত থেকে রেহাই পায়। তাই আপনারা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকলে নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন।

রক্ত উৎপাদন (Blood production):

পেয়ারাতে আছে ভিটামিন E, B6, B5, K এবং মিনারেল যেমন - ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রণ যা আমাদের দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। পেয়ারাতে থাকে ভিটামিন C যা আয়রণ শোষণে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি (Healthy digestion):

প্রতিনিয়ত দেহে বদহজম(Indigestion) হওয়া মানে আমাদের শরীরের গঠন বা শরীর ভেঙে পড়া। কথায় বলে 'স্বাস্থ্যই সম্পদ'।

পেয়ারা আমাদের পাকস্থলীর এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে আমাদের পেটের সমস্যা দূর হয়। পেয়ারা ডায়রিয়া(Diarrhoea) বা পাতলা পায়খানার ক্ষেত্রে দারুন উপকারী।

কোষ্টকাঠিন্য (Constipation):

পেয়ারাতে আছে উচ্চমানের dietary fiber এবং ইহার বীজগুলো laxatives হিসেবে কাজ করে যার জন্য পেয়ারা আমাদের পেট পুরো পরিস্কার রাখে এবং কোষ্টকাঠিন্যের হাত থেকে রেহাই দেয়।

পেয়ারাতে dietary fiber এর পরিমাণ অন্যান্য ফলের থেকে অনেক বেশি। আমরা জানি ফাইবার যত বেশি গ্রহণ করা হবে তত আমাদের কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হবে। তাই আপনি যদি কোষ্টকাঠিন্য এ ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত পেয়ারা খান।

স্কার্ভি প্রতিরোধ (Prevent scurvy):

ভিটামিন C এর অন্যতম একটি অভাবজনিত রোগ হল স্কার্ভি। স্কার্ভি রোগে আমাদের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে।

পেয়ারাতে কমলালেবুর তুলনায় চারগুন পরিমাণ ভিটামিন C থাকে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে স্কার্ভি রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সর্দি - ঠান্ডাতে (Cough & cold):

পেয়ারাতে আছে ভিটামিন C এবং আয়রণ যা আমাদের দেহের immunity system কে শক্তিশালী করে আমাদের সর্দি ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে।

অপরিণত পেয়ারা বা পেয়ারা পাতার রস সর্দি ঠান্ডায় দারুণ উপকারী। পেয়ারা পাতা এবং জল একসাথে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে খেলে সর্দি ঠান্ডা উপশম হয়।

ত্বকের যত্নে (Skin care):

বাজারজাত সব বিউটি প্রোডাক্ট এর চেয়ে পেয়ারা আমাদের ত্বকের খেয়াল ভালো রাখে। পেয়ারাতে আছে ভিটামিন C এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা(Glowness) ধরে রাখে। ত্বকের কুঁচকানোভাব(Wrinkle) দূর করে। আমাদের বয়স বাড়তে দেয় না।

নিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা Health benefits of Neem in Bengali

প্রকৃতি মা আমাদেরকে যতগুলি মহৌষধি গাছের উপহার দিয়েছেন তাদের মধ্যে নিম (Neem) হল অন্যতম। সেই প্রাচীন কাল থেকেই নিম আমাদের দেশের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রাণ।
প্রায় সব রোগের চিকিৎসায় নিম ব্যবহার করা হয়।



নিমের পাতা, ছাল, ফল, ফুল, মূল অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে সমস্ত নিম গাছটাই একটা ওষুধের কারখানা। তবে মূলত নিমের পাতা, ছাল এবং বীজ বেশি ব্যবহৃত হয়।


নিমের কিছু উপকারী দিক (Some useful benefits of Neem):


ফাঙ্গাস ইনফেকশন (Fungal infections):

আমাদের শরীরে ফাঙ্গাসের আক্রমণ ঘটলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। নিমের মধ্যে antifungal element থাকার জন্য ইহা ফাঙ্গাস আক্রমণ প্রতিরোধ করে।

ফাঙ্গাসের আক্রমণ আমাদের ফুসফুস(Lungs), bronchus প্রভৃতি দারুন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিম এই রোগগুলি প্রতিরোধ করে।
ফাঙ্গাসের আক্রমণে আমাদের চুল ও ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা নিমের ব্যবহারে উপশম হয়।
সুতরাং বলা যায় ফাঙ্গাস সংক্রান্ত সমস্ত রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল নিম।

রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ (Control blood sugar):

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নিমের পাতা এবং বীজের তেল রক্তের সুগার কন্ট্রোল করে। তাই আপনাদের যদি সুগারের সমস্যা থেকে থাকে তবে নিয়মিত নিমের পাতা খান।

রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে (Blood purifier agent):

আমরা সবাই জানি রক্ত পরিষ্কারের জন্য নিমের জুড়ি আর নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে ইহা আমাদের রক্ত পরিস্কার করে আসছে।
নিম আমাদের রক্তের ক্ষতিকর পদার্থগুলিকে মলমূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে বের করে দেয়। ফলে আমাদের vital organ গুলি ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ (Control Blood pressure):

উচ্চ রক্তচাপ(Hypertension) আমাদের দেহের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এরফলে আমাদের কিডনি বা হার্ট ফেল করতে পারে। নিম আমাদের রক্তবাহের প্রসারণ ঘটিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

স্ট্রোক প্রতিরোধ (Prevent stroke):

স্ট্রোকের একটি বড় কারণ হল আমাদের রক্ত smooth ভাবে ব্রেনে (Brain) চলাচল করতে না পারা। রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।

নিম রক্তনালীর ভিতরের প্রসারণ ঘটিয়ে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইদের বিনিময়ে(Exchange) সাহায্য করে। ফলে আমরা স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পাই।

লিভারের যত্নে (Protect liver):

লিভার বা যকৃৎ হল আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আমরা প্রতিদিন যেসব ওষুধ খাই তা প্রথমে লিভার দিয়ে পাস হয়। এইসব ওষুধের টক্সিন পদার্থ গুলি লিভারে জমা হতে থাকে। দেহে টক্সিন বেশি হয়ে গেলে লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরফলে আমাদের দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হয়।

নিয়মিত নিমপাতা বা নিমের রস খেলে লিভার থেকে টক্সিন গুলি বেরিয়ে যায় এবং লিভার সুস্থ থাকে।

বাতের ব্যাথা (Arthritis):

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাতের ব্যাথা যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে।
নিমের বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা দিয়ে নিয়মিত মালিশ করলে বাতের ব্যাথা উপশম হয়। এছাড়া এই তেল ত্বকের চুলকানিও দূর করে।

চোখের যত্নে (Eye care):

ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাসের ইনফেকশন হলে আমাদের চোখে নানান বাহ্যিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
একটি পাত্রে নিম পাতা এবং জল মিশিয়ে গরম করে সেই জল ঠান্ডা করে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এরফলে চোখের চুলকানি বা জয় বাংলা(conjunctivitis) দূর হবে।

পেটের গন্ডগোল (Gastric problem):

পাকস্থলীতে আলসার হলে বা জীবাণুর আক্রমণ ঘটলে আমাদের পেটে গ্যাস, অম্বল, পেটে যন্ত্রণা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। নিমপাতার রস নিয়মিত সেবন করলে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কৃমিনাশক হিসেবে (Healing intestinal worm):

কৃমি সমস্যায় যারা ভোগেন বিশেষ করে শিশুরা, তাঁদের ক্ষেত্রে নিম পাতা মহৌষধ।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা চিবিয়ে খেলে কৃমিনাশ হয়। অথবা নিমপাতা জল ফুটিয়ে সেই জল খালি পেটে খেলে কৃমিনাশ হয়।

মশা পিঁপড়ে কামড়ালে (Insect bite):

দেহের কোন জায়গায় মশা বা পিঁপড়ে কামড়িয়ে দিলে নিমপাতা বেঁটে সেই জায়গায় লাগিয়ে দিন। জ্বলন(Inflamation) কমে যাবে। এছাড়া নিমপাতা শুকিয়ে পোড়ালে সেই ধোঁয়ায় মশারা পালিয়ে যায়।

ব্রণ ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধ (Cure Acne & pimples):

নিমে আছে antibacterial element যা ত্বকের ব্রণ বা ফুসকুড়ি হতে বাঁধা দেয়। এছাড়া ত্বকের কালো দাগ পরিস্কার করে।

একটি হাঁড়িতে জল ও কিছু নিমপাতা নিয়ে ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ না জলের রং সবুজ হয়। এরপর সেই জল দিয়ে স্নান(Bath) করুন। সারা গায়ের ব্রণ ভালো হয়ে যাবে।

অথবা কিছু নিমপাতা নিয়ে ভালো করে বেঁটে পেস্ট করে নিন। তারপর সেই পেস্টটি মুখের ব্রণ বা ফুসকুড়িতে লাগান।
30 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ব্রণগুলি ধীরে ধীরে বসে যাবে।

চুলের যত্নে (Hair care):

আপনার কি চুল পড়ে যাচ্ছে ? বা মাথায় খুসকি আছে? নাকি মাথা সবসময় চুলকায়?
তাহলে তার একমাত্র সমাধান নিম। নিমে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল এলিমেন্ট যা স্কাল্পে খুসকি এবং চুলকানি দূর করে।

একটি পাত্রে জল ও একমুঠো নিমপাতা নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন যতক্ষণ না জল সবুজ হয়ে যায়। তারপর সেই জল হালকা গরম থাকা অবস্থায় সমস্ত চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া বা খুসকি সমস্যা দূর হবে।

নিমপাতা রোদে শুকিয়ে নিয়ে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। তারপর সেই তেল ছেঁকে নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিন এবং নিয়মিত ব্যবহার করুন। চুলের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

আমলকির স্বাস্থ্য উপকারিতা Some useful health benefits of Amla in Bengali

প্রকৃতি মা আমাদেরকে যতগুলি অসাধারণ ও বহু-উপকারী ফলের উপহার দিয়েছেন আমলকি তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ফল। ভারতেই আমলকির জন্ম এবং এখানে শীতকালে প্রচুর পরিমানে আমলকি উৎপন্ন হয়। ভারতে জন্ম বলে আমলকির আর এক নাম Indian gooseberry. তবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এর ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। ভারতে আমলকি গাছকে পবিত্র গাছ হিসাবে গন্য করা হয়।



আমলকি মূলত Vitamin C এর উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি মাঝারি আকৃতির আমলকিতে দুইটি কমলালেবুর সমান Vitamin C পাওয়া যায়। এছাড়া আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমলকি একটি খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। আমলকির উপকারী গুন অনেক থাকায় এটি আয়ুর্বেদের একটি অমূল্য নাম।

আমলকি খাদ্যের শোষণে সাহায্য করে, পাকথলির এসিড সমতা বজায় রাখে। মূত্রনালির বিভিন্ন রোগে এটি ব্যবহৃত হয়। উচ্চরক্ত চাপ, সুগার নিয়ন্ত্রণে এটি খুবই উপকারী একটি ফল। সাধারণ সর্দি কাশি তে বা ফুসফুসের অন্যান্য রোগে এটি খুব উপকারী। ত্বকের প্রাকৃতিক সুন্দরতা বজায় রাখতে এর কোন জুড়ি নেই। এছাড়া চুলের নানান সমস্যা সমাধানে এটি খুব উপকারী।


আমলকির কিছু অসাধারণ উপকারী দিক (Some useful benefits of Amla):


1. অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ:

আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে Vitamin C এবং Antioxidant যা আমাদের দেহের কোষে পুষ্টি জুগিয়ে কোষগুলোর পুনর্গঠনে সাহায্য করে। দেহ কোষগুলি থেকে toxin পদার্থ বের করে দিয়ে কোষগুলিকে নবজীবন প্রদান করে। এইভাবে আমলকি আমাদের দেহকোষ গুলির পুনর্গঠনে সাহায্য করে আমাদের যৌবন ধরে রাখে।

তাই আমি বলবো যাঁরা অকাল বার্ধক্যের কবলে পড়েছেন বা ভাবছেন বয়সের তুলনায় মনে হচ্ছে অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে, তারা নিয়মিত আমলকি খান।

2. চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি:

চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আমলকি খুবই উপকারী। Antioxidant থাকার জন্য আমলকি চোখের রেটিনায় কোনো রকম চাপ প্রদান করতে দেয় না, ফলে আমাদের চোখ চাপ থেকে সুরক্ষিত থাকে। এছাড়া আমলকি চোখের ছানি(Cataract) প্রতিরোধে খুব উপকারী।

কয়েকটি আমলকির টুকরো কয়েক ঘন্টা জলে ভিজিয়ে সেই জল দিয়ে চোখে ঝাপটা দিলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

3. মজবুত হাড় গঠন:

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকার জন্য এটি আমাদের দেহের হাড় মজবুত করে। তাই নিয়মিত আমলকি খেলে আমাদের দেহের হাড় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

4. দেহের ওজন হ্রাস:

মোটা হয়ে যাওয়া বা দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া বর্তমান সমাজের একটি বড় সমস্যা। আমরা দেহের ওজন কমানোর জন্য কি না করি, কত না ওষুধ খাই। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না যে আমলকি প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখে। আমলকি দেহের Metabolism ক্ষমতা বাড়িয়ে দেহ থেকে ফ্যাট বের করে দেয়। ফলে দেহের ওজন স্বাভাবিক থাকে। তাই আমাদের দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের নিয়মিত আমলকি খেতে হবে।

5. হার্টের অসুখ প্রতিরোধ:

রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বেড়ে গেলে হার্টের সমস্যা শুরু হয়। আমলকি আমাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে দিয়ে আমাদের হার্টের সমস্যা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত আমলকি খেলে তা রক্তনালীর ভিতরের প্রাচীর পুরু হতে দেয় না, ফলে আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

6. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ:

আমলকি ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে খুবই উপকারী একটা ফল। আমলকি কোষের Isolated group কে উজ্জীবিত করে ইনসুলিন ক্ষরণে সাহায্য করে। আমলকিতে আছে antioxidant যা রক্তের গ্লুকোজ লেবেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং আলবুমিন মাত্রা কমিয়ে দেয়।
আমলকির রস এবং হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

7. হজম শক্তি বৃদ্ধি:

আমলকিতে আছে উচ্চমানের ফাইবার যা আমাদের পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। আমলকি টক স্বাদ যুক্ত হওয়ায় ইহা পাকথলির হজমকারী এনজাইম গুলোকে সক্রিয় করে তোলে, ফলে আমাদের হজম শক্তি বেড়ে যায়।
আমলকিতে ফাইবার বেশি থাকায় তা আমাদের পেট পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য ভুগছেন তারা নিয়মিত আমলকি খান।
এক গ্লাস দুধের সাথে আমলকি রস মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে হজম শক্তি ঠিক থাকে।

8. দাঁতের রোগ প্রতিরোধ:

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে Vitamin C থাকায় তা দাঁতের স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁতের যন্ত্রণা, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।

চুলের যত্নে আমলকি (Amla as hair care):


1. অকাল পক্কতা প্রতিরোধ:

আমলকিতে আছে antioxidant যা চুলের রঞ্জক পদার্থ দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করে ফলে আমাদের চুল অকালে পেকে যায় না।
কাঁচা আমলকি পেস্ট করে বা আমলকি পাউডার চুলে লাগালে খুব উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া নিয়মিত আমলকি সমৃদ্ধ হেয়ার অয়েল ব্যাবহার করলে একই উপকার হয়।

2. চুল পড়া রোধ:

আমলকিতে antioxidant এবং vitamin C থাকায় আমাদের চুল অকালে পরে যায় না। নিয়মিত কাঁচা আমলকি খাওয়া বা আমলা হেয়ার অয়েল ব্যাবহার চুলের অকাল পরে যাওয়া রোধ করে।

ত্বকের যত্নে আমলকি (Amla as skin care):


1. মুখের ব্রণ ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধ:

আমলকির মধ্যে রক্ত পরিস্কার করার ক্ষমতা আছে। তাই আমলকির রস, পাউডার বা কাঁচা আমলকি খেলে তা আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে ব্রণ বা ফুসকুড়ি প্রতিরোধ করে।
তাছাড়া আমলকি পাউডার এবং হলুদ গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগালে ব্রণ ভালো হয়।

2. ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখা:

আমলকিতে আছে antioxidant এবং প্রচুর পরিমাণে Vitamin C যা আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখে। নিয়মিত আমলকি খেলে আমাদের ত্বক কুঁচকে যায় না, ত্বকের glamour বজায় থাকে। ফলে দীর্ঘ যৌবন লাভ করা যায়।